‘চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু’: পরিবারের হয়ে অভিযোগ করবে ডিএসসিসি
২৮ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৩০
ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম চিকিৎসা না পেয়েই মারা গেছেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। মৃত্যুর পরও করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহে কারও সহায়তা পানি বলে অভিযোগ তাদের। ওই কর্মকর্তার কর্মস্থল ডিএসসিসি বলছে, তারা এ ঘটনাটি এরই মধ্যে মৌখিকভাবে অবহিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। লিখিত অভিযোগও জানানো হবে বলে জানিয়েছে ডিএসসি।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মিল্লাতুল ইসলাম। মৃত্যুর দুই দিন পর জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়েও চিকিৎসা না পাওয়া এবং মৃত্যুর পর করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তার পরিবারের।
মিল্লাতুল ইসলামের ছেলে খন্দকার মাজহারুল ইসলাম শাওন বলেন, ২১ এপ্রিল বাবা বাথরুমের দরজার সঙ্গে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। রাতে বাবার জ্বর এসেছিল। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণেই জ্বর এসেছিল বলে ভেবেছিলেন বাবা। নাপা খাওয়ার পর জ্বর চলেও গিয়েছিল। বুধবার বাবা অফিস করেছেন। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকেই বাসাতে অফিসের কাজ করছিলেন। দুপুরে অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার পরই বাবা হঠাৎ বুকে হাত চেপে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পড়েন। বলেন, শরীর খারাপ লাগছে। বাবা ঘামছিলেন, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।
আরও পড়ুন- মৃত্যুর ২ দিন পর জানা গেল ডিএসসিসি কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ
শাওন বলেন, আগের জ্বর ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল— এ অবস্থা দেখে আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) হটলাইনে ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেনি। বাবার অবস্থা খারাপ হচ্ছে বলে তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বলা হয়, করোনা পজিটিভ না হলে রোগী ভর্তি হবে না। সেখানে পরীক্ষা করতে গেলেও তারা জানান, পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। পরে বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শাওন আফসোস করে বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে যদি বাবাকে অক্সিজেন দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো বাবা বেঁচেও যেতে পারতেন। কিন্তু তারা তো বাবাকে ভর্তিই করেনি। আবার বাবার মৃত্যুর পরও আইইডিসিআরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও চেষ্টা করেছিলেন। তারাও ব্যর্থ হয়েছেন। পরে আমরাই বাবার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। বাবার মৃত্যুর দুই দিন পর জানতে পারলাম, বাবা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ মো. এমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, এত কাজ পাগল মানুষটি মৃত্যুর আগে ঠিকমতো চিকিৎসা পেলেন না, এই আফসোস তো ভুলে যাওয়ার নয়। এমনকি তার মৃত্যুর পরও তার নমুনা সংগ্রহ করার লোক পাচ্ছিলাম না। এটা অনেক বড় কষ্টের বিষয়।
এমদাদুল হক আরও বলেন, আমরা এ ঘটনায় অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। এরই মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিষয়টি মৌখিকভাবে সচিবকে জানানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করব।
চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালকের মোবাইল নম্বরে কল করলে তিনি নিজে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
মিল্লাতুল ইসলামের নমুনা সংগ্রহ বিষয়ক জটিলতার বিষয়ে জানতে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আইইডিসিআর করোনাভাইরাস পরীক্ষা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ডিএসসিসি কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলাম