Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মার তলে মাটি বদলে যেভাবে দাঁড়ালো পিলার, জানালেন জামিলুর রেজা


২৮ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২০

জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। দেশের প্রকৌশল খাতের এক মহারথির নাম। স্বপ্নের পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলেরও প্রধান ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ড. জামিলুর। সবশেষ গত ১৭ জানুয়ারি সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পদ্মাসেতু প্রকল্পের একটি জটিল পর্যায় ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ পদ্ধতির ব্যবহার ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাব্বির আহমেদ। এই জাতীয় অধ্যাপকের প্রয়াণে তাকে স্মরণ করে সাক্ষাৎকারটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো

বিজ্ঞাপন

পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের। তলদেশে স্বাভাবিক যে মাটি পাওয়ার কথা, সেটি মেলেনি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরু হলে বিষয়টি টের পান সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য গতবছর আটকে যায় ২২টি পিলারের কাজ। তবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু তৈরিতে একে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে দেননি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা এমন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যাতে করে নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথা যায়। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই বিরল পদ্ধতিতেই বসানো হয়ছে পদ্মাসেতুর বেশকিছু পিলার, যার ওপর বসেছে সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি।

বিজ্ঞাপন

‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’য়ের মতো বিরল পদ্ধতিতে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, তা নিয়ে সারাবাংলার কথা হয় পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর। তিনি জানান, এরকম পদ্ধতির ব্যবহারের নমুনা বিশ্বে খুব একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়েছে। তারপর ওই মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে পিলার।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল সেতুর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতু নির্মাণের আগে নদীর তলদেশের মাটি সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল, কাজ শুরুর পর সেই ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি।

https://youtu.be/g4uuEhmefqE

বর্ষীয়ান এই প্রকৌশলী বলেন, কাজ শুরু করতে গিয়ে নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে, তা পিলার গেঁথে রাখার উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় কাজ করার জন্য দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, পাইল নিয়ে যেতে হবে আরও গভীরে, তা না হলে সেতু ভেঙে বা দেবে যেতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, গভীরতা কমিয়ে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, প্রথম পদ্ধতিটি সম্ভব ছিল না। কারণ বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তির হ্যামার দিয়েও এত গভীরে পাইল ড্রাইভিং করা যাবে না। পদ্মাসেতুতে যে হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছে, তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেই পাইল ড্রাইভিং করা হচ্ছে। প্রথম পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইলে আরও ১৩০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, যা এই হ্যামার দিয়ে সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি হ্যামার আনতে হবে এবং সে ধরনের হ্যামার জার্মানিতে তৈরি করে আনতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এ অবস্থায় পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ দেরি হয়ে যেতে পারে।

এ পরিস্থিতিতেই পদ্মাসেতুর পিলার বসাতে বিরল হলেও দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে তারপর পাইল ড্রাইভিং করা হয়। এমন পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। গোটা বিশ্বেও এই পদ্ধতি প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।

পদ্মাসেতু এখন ৩ কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান

পদ্ধতিটি যেভাবে প্রয়োগ করা হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়। আর পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। কেমিক্যালের প্রভাবে তখন তলদেশের সেই মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। একপর্যায়ে সেই মাটি পাইলের লোড বহনে সক্ষম হয়ে ওঠে। তখন আর পাইল বসাতে কোনো বাধা থাকে না।

পদ্মাসেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদ্মাসেতুর মোট ১১টি খুঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে। ৩২ নম্বর খুঁটিও রয়েছে এর মধ্যে। এই ৩২ নম্বর খুঁটি ও এর পাশের ৩৩ নম্বর খুঁটির ওপরই গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বসানো হয়েছে সেতুর ২১তম স্প্যান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩৬টি খুঁটির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ছয়টি খুঁটির (৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯) কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে ৮, ১০ , ১১ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজ আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হবে। বাকি দুইটি, অর্থাৎ ২৬ ও ২৭ নম্বর খুঁটির কাজ শেষ হবে এপ্রিল নাগাদ।

এদিকে, সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২১টি স্প্যান স্থায়ীভাবে স্থাপন হওয়ায় পদ্মাসেতু এখন তিন কিলোমিটারেরও বেশি দৃশ্যমান। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিমাসে তিনটি করে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী জামিলুর রেজা চৌধুরী পদ্মাসেতু পাইলিং স্ক্রিন গ্রাউটিং স্প্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর