করোনায় মৃতদেহের সৎকারে একজন খোরশেদ ও তার দল
২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৪৭
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আপনকে করেছে পর আর পরকে করেছে আপন। এটি সারাবিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কে আপন আর কে পর। আত্মীয়,স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন কেউ কারও নয়। আবার এই করোনা ভাইরাসই মানুষকে মানবতার পাশে রাখছে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানুষ। মানুষকে শিখিয়েছে মানবিক ও মহৎ হতে। এমনই একজন মহৎ প্রাণ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার (খোরশেদ)।
কেন এই মানুষটিকে মহৎ বলছি? কারণ তিনি ও তার দল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের মৃতদেহ সৎকার করছেন। এ পর্যন্ত তারা প্রায় চল্লিশটি মৃতদেহ সৎকার করেছেন। তার মধ্যে বিভিন্ন ধর্মালম্বীর মানুষ রয়েছে। কিন্তু কেন তিনি এই উদ্যোগ নিলেন? আর কেনইবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় মৃতদের সৎকার করছেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাকসুদুল আলম খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মানুষ হিসেবে কাজটি করছি। প্রথমত আমি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। যেহেতু ১৭ বছর মানুষ আমাকে মূল্যায়ন করেছে, ভালোবেসেছে। তাই এখন আমার উচিত মানুষকে ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসার কিছুটা হলেও প্রতিদান দেওয়া। মানুষের ভালোবাসার কিছুটা হলেও ঋণ শোধ করা। সেজন্য আমার জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমি ও আমার দল এই কাজ করে যাচ্ছি।’
আপনারা কীভাবে মৃতদেহের খবর পান?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মৃত ব্যক্তির পরিবার, সিটি করপোরেশন বা থানা পুলিশ থেকে জানানো হয়। কারণ সবাই জেনে গেছে এখন এই কাজটি আমরা করছি। আর আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে যাই এবং ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে মৃতদেহের সৎকার করি। এছাড়া সারাবিশ্ব এখন বিপদ সংকুল। সেজন্য আমার এগিয়ে আসা। পাশাপাশি আল্লাহকে রাজি-খুশি করা এবং আমি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ যেন আমারও জানাজা নসিব করে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী খোকন সাহা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একটি ৭ তলা ভবনের ফ্ল্যাটের মালিক। সাত বন্ধু মিলে ফ্ল্যাট বাড়িটি করেছেন। ভবনটির চার তলায় তিনি স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন। বিত্ত-বৈভব ও ধনসম্পত্তির কমতি নেই। কিন্তু শারীরিক অবস্থা যখন প্রচণ্ড খারাপ তখন আশপাশের ফ্ল্যাটে থাকা সেই বন্ধু এবং পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের ডেকেছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করতে। কিন্তু কেউ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।
পরে স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়েই খোকন সাহাকে যখন কোনো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাসা থেকে নামিয়ে আনছিলেন। ঠিক সেই সময় নামানোর পথে সিঁড়িতেই গতকাল মারা যান খোকন সাহা। এরপরও কেউ এগিয়ে আসেনি। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ খোকন সাহার মরদেহ সিঁড়িতেই পড়েছিল। কেউ একবারের জন্য ছুঁয়েও দেখেনি। এমনকি তার স্ত্রী-কন্যার কান্নায়ও মন গলেনি কারও।
এরপর মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার (খোরশেদ) ও তার দল। মৃতের সম্প্রদায় কিংবা তার স্বজনরা কেউ না আসায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে খোকন সাহার মুখাগ্নির কাজটিও করেন মাকসুদুল আলম নিজেই।
করোনা ভাইরাস শুধুমাত্র মানুষের স্বার্থপরতার দিকটি উন্মোচন করেনি। পাশাপাশি খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে মাকসুদুল আলম খন্দকারের মতো কিছু পুণ্যাত্মাকেও।