করোনায় অর্ধেক কমেছে ডিমের চাহিদা, দামও কম
৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৫৯
ঢাকা: করোনায় চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই বাজারে ডিমের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ডিমের চাহিদা কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ। হোটেল- রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকা, স্কুল ও কলেজে ছুটি এবং সামগ্রিকভাবে সাধারণ ছুটির প্রভাবেই ডিমের চাহিদা কমেছে। শহরের মানুষ গ্রামে চলে যাওয়াও ডিমের চাহিদা কমার অন্যতম কারণ। সাধারণত রোজাতেও ডিমের চাহিদা কম থাকে। সবমিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখি বাজারে ডিমের দাম এখন নিম্নমুখি।
জানা গেছে, করোনার প্রথম দিকে ‘প্যানিক ক্রয়ের’ সময় বাজারে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছিল। পরে ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে ডিমের দাম। বর্তমানে ৩০ টাকার নিচেও প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রতি হালি ডিমের দাম এখন ৮ থেকে ১০ টাকা কম। সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হালিতে আগে ডিম বিক্রি হতো। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা হালিতে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে ডিম ও মুরগির দামই এখন সবচেয়ে কম। এসবের চাহিদা থাকে- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গার্মেন্টস, স্কুল, কলেজ ও বাজারে। এসব জায়গাতেই ৫০ শতাংশ চাহিদা রয়েছে ডিম ও মাংসের। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ডিমের চাহিদা কমেছে। আবার শহরের লোকজন গ্রামের বাড়িতে গেছে। গ্রামেও ডিমের তেমন চাহিদা নেই। শহরের বাসিন্দা কমে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা কমার অন্যতম কারণ।’
বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার’স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দীক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই ডিমের দাম কমেছে। এখন সকালে নাস্তাতে কেউ ডিম খায় না। এছাড়া রোজা চলছে। আবার ডিমের উৎপাদন ঠিক রয়েছে। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই দাম কম।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রভাবেই মূলত ডিমের দাম কমেছে। ফ্যাক্টরি হলে উৎপাদন বন্ধ বা কমিয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু মুরগির ডিম পাড়া তো বন্ধ নেই। বিপরীতে ভোক্তার সংখ্যা কমে গেছে। কারণ সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে ডিমের কেনাবেচনা কমে গেছে। এ কারণ ডিমের দাম কমেছে। আরকটি কারণ হচ্ছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিম নিয়ে নেতিবাচক তথ্য প্রচার। ফলে অনেকেই করোনার সময় ডিম খাচ্ছে না। ডিমের দাম কমার এটিও একটি কারণ।’
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের তথ্যমতে, সাধারণ সময়ে দেশে এখন প্রতিদিন সাড়ে ৪ কোটি ডিম পিস উৎপাদন হয়ে আসছিল। তবে করোনার আগেই ডিম উৎপাদন হয় এমন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ওই খামারগুলো বন্ধ হয়েছিল বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে। করোনার পরে ওই ৬৫ শতাংশ খামার থেকে আরও ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খাবার ও ডিমের দাম না পাওয়ার কারণেই ওইসব লেয়ার খামার বন্ধ হয়। অর্থাৎ বাজারে ডিমের উৎপানও অন্তত ৩৫ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বছরে জনপ্রতি ন্যূনতম ১০৪টি ডিম খাওয়া উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ১০৪ টির কম ডিম খেয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে প্রতিটি মানুষ বছরে ২২০টির মতো ডিম খেয়ে থাকে। জাপানে ডিম খাওয়ার প্রবণতা বছরে প্রায় ৬০০টি। সেদিক থেকে ডিম খাওয়ার প্রবণতায়ও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।