ঢাকার বাইরের শ্রমিক দিয়েই চলছে পোশাক কারখানা
৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৭
ঢাকা: সীমিত আকারে চলছে দেশের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা। গ্রাম থেকে শ্রমিকও এসেছেন কাজে। তবে নতুন করে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এখনই তাদের গ্রাম থেকে না আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলেই তাদের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। যেসব শ্রমিক গ্রামে রয়েছেন তাদের বেতন পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে গ্রামের শ্রমিকদের ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার বাইরে অবস্থানরত পোশাক শ্রমিকদের এখন ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই, বেতন পৌঁছে দেওয়া হবে। আর অর্থনীতি সচল রাখতে গার্মেন্টস কারখানা খোলা হলেও শ্রমিকদের এখনই গ্রাম থেকে না ফেরার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে এক ভিডিও বার্তায় সংগঠনটির প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ কথা জানান।
তবে চালু থাকা কারখানায় শ্রমিক এসেছেন ঢাকার বাইরে থেকে। ঢাকার বিভিন্ন কারখানায় গ্রাম থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সীমিত বলা হলেও কারখানাগুলোতে এখন বলতে গেলে পুরোদমেই কাজ শুরু হয়েছে।
মালিবাগের একটি কারখানার শ্রমিক জানান, সাধারণ ছুটির মধ্যেই গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। গেল চারদিন ধরে কারখানায় কাজ করছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গ্রাম থেকে আমাদের মতো আরও অনেক শ্রমিকই এসেছেন। বেতন পাওয়ার জন্যই অনেক শ্রমিককে আসতে হয়েছে। যারা আসেনি এখনো তারা বেতন পায়নি। মিরপুরের একটি কারখানার শ্রমিক ফাতেমা বলেন, গ্রাম থেকে এসে ২৬ তারিখ কাজে যোগ দিয়েছি। বাসায় উঠতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এখন কাজ চলছে গার্মেন্টেসে।’
গাজীপুরের একটি কারখানার শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ২৪ তারিখই গার্মেন্টেসে আসতে হয়েছে। গাজীপুরের কালিগঞ্জ করোনার হটস্পট হলেও আমাদের গার্মেন্টস খুলে দিয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। বাসায় উঠতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। বাড়িওয়ালা বলেছিলেন, ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে। করোনা আছে কি না আমরা শ্রমিকরা সেই সার্টিফিকেট কোথা থেকে পাবো। পরে অবশ্য বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় উঠতে পেরেছি।
জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শ্রমিকদের দিয়ে গার্মেন্টস চালাচ্ছি, এ কথা ঠিক নয়। ঢাকায় যেমন গার্মেন্টস খুলেছে, গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জম চট্টগ্রাম সর্বত্রই গার্মেন্টেসে এখন কাজ চলছে। সুপারভাইজাররা শ্রমিকদের ফোন দিয়ে বলেছে, কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। এতে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে রংপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালি, ফেনী থেকে ঢাকা বা নগরীমুখী হয়েছে। অনেক কারখানার মালিকরা আবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সচেতন শ্রমিকদের কাজে ডেকে আনছে না। কারণ ওইসব শ্রমিককে ছাটাই করার উদ্দেশ্যে রয়েছে মালিকদের। কাজেই গার্মেন্টস মালিকরা যা করছেন, তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মন্ত্রীরা যা বলছেন, তা ঠিক নয়।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, গতকালের পর আজ অনেক শ্রমিককে ফোন দিয়ে বলেছে এখনই আসতে হবে না। ৫ তারিখ পর্যন্ত দেখার জন্য। কিন্তু তার আগেই তো অনেক শ্রমিক চলে এসেছে। তবে গ্রামেও এখন অনেক শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিক না আসলে তার মধ্যেও ভয় কাজ করে। সে বেতন ঠিকমতো পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে থাকে। আবার এপ্রিলের বেতন কিভাবে দেওয়া হবে আমাদের কাছে এখনো তা স্পষ্ট না।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ঢাকার ভেতরে অবস্থানরত শ্রমিক দিয়েই সীমিত আকারে পোশাক কারখানা চালাতে হবে। এই মুহূর্তে ঢাকার বাইরে থেকে গার্মেন্টস কর্মী আসতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিক দিয়ে সীমিত আকারে গার্মেন্টস চালানো হচ্ছে বলে মালিক পক্ষ জানিয়েছেন। সীমিত আকারে গার্মেন্টস খোলা রাখা বিষয়ে মালিক পক্ষ বলেছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা গার্মেন্টস খোলা রেখেছেন।’
ঢাকার বাইরে থাকা পোশাককর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে আপনারা ঢাকায় আসবেন। আপনাদের বেতনে কোনো সমস্যা হবে না বলে মালিক পক্ষ নিশ্চয়তা দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, দেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো পোশাক কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ২২৭৪। আর বিকেএমইএ’র চালু থাকা কারখানার সংখ্যা ৮৩৩। ঢাকায় বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ৩৬০টি। সবমিলিয়ে ঢাকায় চালু রয়েছে ৪ শ-এর বেশি পোশাক কারখানা।