শ্রম অধিকার নেই ৫ কোটি ১৭ লাখ শ্রমিকের
১ মে ২০২০ ০৮:৪৩
ঢাকা: দেশের ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ দশমিক ১ ভাগ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হওয়ায় এই বিপুল পরিমাণ মানুষ রয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তাদের নেই নিয়োগপত্র বা মালিকের সঙ্গে কাজের চুক্তিপত্র। যেকোনো সময় বেকার হয়ে যেতে পারেন। কাজ না করলে কোনো উপার্জন থাকে না বলে জীবনযাত্রার মানও উন্নত নয়। এক কথায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হওয়ায় এই বিপুল জনগোষ্ঠী শ্রম অধিকার থেকেই বঞ্চিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশের ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এর মধ্যে কৃষিতে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। একইভাবে শিল্প খাতের মোট শ্রমশক্তির ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সেবা খাতের মোট শ্রমশক্তির ৭১ দশমিক ৮ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত।
আরও পড়ুন- করোনা বিধ্বস্ত বিশ্বে মহান মে দিবস আজ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেকোনো দুর্যোগ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপরই সবার আগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। করোনাভাইরাসের অভিঘাতও এই শ্রেণির শ্রমিকদের ওপরই প্রথমে পড়েছে। অথচ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের রয়েছে বড় ভূমিকা। কেবল করোনা মহামারি বা যেকোনো দুর্যোগই নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতেই এই শ্রেণির মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে তা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জানতে চাইলে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপর ভর করেই মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু এই খাতে নিয়োজিতরা রয়েছেন ঝুঁকিতে। তাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই, মজুরি কম, উৎপাদনশীলতা কম, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় বঞ্চনা এবং নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যাপক মজুরি বৈষম্যসহ বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাতও কিন্তু এই শ্রেণির শ্রমিকদের ওপরই সবার আগে পড়েছে। তারাই যেকোনো দুর্যোগে কাজ হারায় সবার আগে। আর দুর্যোাগ কেটে গেলেও যে কাজে ফিরবেন, সে নিশ্চয়তা থাকে না। করোনার কারণে কাজ হারানোদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, শ্রম শক্তির বিশাল অংশ কৃষিতে যুক্ত। আর কৃষির পুরোটাই প্রায় অপ্রাতিষ্ঠানিক। এছাড়া শহরে ছোট ছোট শিল্প কারখানা, টেইলার্স ও বিভিন্ন কর্মে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী রয়েছে। এরা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হচ্ছে না।
এদিকে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত যে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার শ্রমিকের কথা বলা হচ্ছে, সে হিসাবটি বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নতুন জরিপ হলেই হালনাগাদ চিত্রটি উঠে আসবে।
নতুন জরিপের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না— জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৬-১৭ সালের পর এ সংক্রান্ত আর কোনো জরিপ হয়নি। কারণ এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো শ্রমশক্তি জরিপের নতুন প্রকল্পটির বিষয়ে তারা বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছিল। আমরা সেগুলো প্রতিপালন করে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পাঠিয়েছি। প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান। অনুমোদন পাওয়ার পরই নতুন জরিপের কাজ শুরু হবে।
নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই— বলেন তাজুল ইসলাম।
বিবিএসের সবশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ১৫ বছরের বেশি বয়সী মোট পাঁচ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার, পুরুষ তিন কোটি ৪৬ লাখ ১৩ হাজার। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানি খাতে নিয়োজিত হওয়ার হার বেশি। এ সংখ্যা গ্রামে তিন কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার, শহরে এক কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার।
বিভাগীয় পর্যায়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষ এক কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ করছেন ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগে রয়েছে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। এরপর রংপুর বিভাগে ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার, খুলনা বিভাগে ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার, সিলেট বিভাগে ২৪ লাখ ৯৮ হাজার ও বরিশাল বিভাগে ২৪ লাখ ২৮ হাজার মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিক পরিসংখ্যান ব্যুরো মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার