যুক্তরাষ্ট্রেও পিপিই সংকট, অভিজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশি চিকিৎসক
২ মে ২০২০ ১৯:৪৬
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকেই এক মানবিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই ভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় ফ্রন্ট লাইনযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। আর চিকিৎসা কাজে দরকার পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই)। বাড়তি চাহিদার কারণে বিশ্বের অনেক দেশই চিকিৎসকদের মধ্যে পিপিই দিতে পারছে না। তারপরও থেমে নেই চিকিৎসকরা।
তেমনই একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। নিউইয়র্কে অফিস টাইম শেষে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। নিউইয়র্কে রীতিমতো সুপারহিরো হয়ে উঠেছেন প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি এই চিকিৎসক।
তবে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হয়েছে তার তিক্ত অভিজ্ঞতাও। পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পাচ্ছেন না দেশটির সরকারের কাছ থেকে। ফলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঝুঁকি নিয়েই সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘আমাকে যে পিপিই দেওয়া হয়েছিল পাঁচদিন পর গিয়ে বললাম আরেকটি পিপিই দিতে। তারা দিচ্ছে না। বললাম, এই পিপিই থেকে মানুষের গন্ধ বের হচ্ছে দেখো। তখন দিলো।’
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ভবন নির্মাণ শ্রমিকরা পিপিই ব্যবহার করে। আমি বহু কষ্ট করে পিপিই সেখান থেকে সংগ্রহ করেছি। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের চিকিৎসা দিচ্ছি। আমারও ঝুঁকি কি নেই, অবশ্যই আছে। তারপরও আমি চাইছি, বাড়ি থাকা রোগীদের সুস্থ করতে। তাহলে রোগীরা হাসপাতাল বিমুখ হবেন এবং হাসপাতালের ওপর এতে চাপ কমবে।’
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নিজের চেম্বারটিকে কন্ট্রোলরুম বানিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ডা. ফেরদৌস। সঙ্গে রয়েছে তার ১৫ সদস্যের চিকিৎসক দল। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণা এলে তিনি নিজের বাড়ি থেকেই কার্যক্রম শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ নিউইয়র্কবাসীর কাছে তিনি ‘ডক্টর অব হিউম্যানিটি’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
কেবল চিকিৎসাসেবা দেওয়াই নয়, সঙ্গে সামাজিক ও মানবিক নানা সেবা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। কয়েকজন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ওই চিকিৎসকদের রোগীরাও ফেরদৌসকে ফোন করছেন। শুধু তাই নয় বিভিন্ন অসুবিধার কথা জানিয়েও শত শত ফোন আসছে তার কাছে। তিনি সাধ্যমতো উত্তরও দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘এমন অবস্থা তো আর কখনও দেখিনি। মানুষের নানা সেবা দরকার। আমি আমার ছোট্ট দলটিকে নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি।’
টেলিমেডিসিন সেবার অংশ হিসেবে ফেসবুক, ডাক্তারবাড়ি ইউটিউব চ্যানেল, নিজের গড়ে তোলা ডিটিভি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন ডা. ফেরদৌস। সরাসরি মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তাকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী দিনা টিপু খন্দকার।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘আমাদের কন্ট্রোল রুমে এখন অনেক কাজ। কখনও চাল ডাল বিতরণ, কখনও স্যানিটাইজার বানানো। কখনও লাইভের প্রস্তুতি। আবার কখনও হাসপাতালে যোগাযোগ করা। কখনও শিশু খাদ্য কিনতে যাওয়া। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। আমার সহকর্মীরা পাশে না থাকলে, কাজটা করা সহজ হতো না।’
এখানেই শেষ নয়, নিউইয়র্কে মৃতদের দাফন করানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাজ। সেরকম বিপদে কেউ পড়লে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেছেন তাকে পাশে পাওয়া যাবে। এছাড়াও, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি গঠন করেছেন সেবাডটকম নামের একটি প্লাটফর্ম। যে কেউ সেবাডটকম থেকে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারবেন।
ডা. ফেরদৌস বলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এ অবস্থা কেটে যাবে, সামনে সুন্দর দিনের হাতছানি তিনি দেখতে পাচ্ছেন।’
ডা. ফেরদৌস খন্দকার প্রয়োজনে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চান বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গেও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আমাকে কেউ ডাকে, যদি দরকার হয় অবশ্যই আমি বাংলাদেশে আসব। যে কোনো মুহূর্তে চলে আসব।’
করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস টপ নিউজ ফেরদৌস খন্দকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র