Thursday 10 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মায়ের মৃত্যুর ব্যাখ্যা চেয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালকে আইনি নোটিশ


২ মে ২০২০ ২০:৩৮ | আপডেট: ২ মে ২০২০ ২০:৪৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: ‘অবহেলায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে, বলে উল্লেখ করে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সন্তান। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দারের মায়ের মৃত্যুতে তার পক্ষে আইনজীবী গোলাম মোস্তফা (শাহীন) হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ নোটিশ দেন।

নোটিশে তার মায়ের মৃত্যুর জন্য হাসপাতালটির অবহেলা, অসদাচরণ ও অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে যৌক্তিক ও আইনগত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

৩০ এপ্রিল হাসপাতালকে নোটিশ পাঠালেও নোটিশে বিষয়টি শনিবার (২ মে) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তা না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশকারি ডা. জিয়া উদ্দিন হায়দারের মা মাহমুদা খানম (৭৫) গত ২৩ এপ্রিল মারা যান।

নোটিশে বলা হয়েছে, লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন রোগীকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে মাহমুদা খানমকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৪ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

কম্বোডিয়ায় থাকা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার জানান, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারে আমরা তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। একটি হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে আমাদের মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। আম্মার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড।

তিনি জানান, গত ৫ এপ্রিল তার মায়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু ১১ এপ্রিল তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও করোনার ভয়ে সবাই ফিরিয়ে দেয়। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কারণ তার রক্তে তখন অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।

ডা. হায়দার বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল আমার ভাইদের ডেকে বলে, আম্মার দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষাটি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং তাকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত, যদি ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তবে আম্মা অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন ও মৃত্যুবরণ করবেন। আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আম্মাকে রিলিজ করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, কোনো মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই আম্মাকে ওখান থেকে কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এরপর কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আম্মার মস্তিষ্কের যে ড্যামেজ হয়েছে তা আর কাটিয়ে ওঠা ওনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। উনি গভীর কোমায় চলে যান। ২৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় আম্মা মারা যান।

ডা. জিয়া বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়ার জন্য এবং যথাযথ অক্সিজেন ব্যবস্থায় আম্মাকে পরিবহন না করার জন্য ওনার মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ফলশ্রুতিতে উনি চলে যান গভীর কোমায়। এর সাথে যোগ হয়েছিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-আয়ার ভীতি, অমনোযোগিতা, অপ্রতুলতা আর অদক্ষতা এবং ঘায়ের মাধ্যমে (শুয়ে থাকতে থাকতে তার পিঠে ঘা হয়েছিল) সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়া ‘সেপসিস’, যা খুব দ্রুত আম্মার হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ডা. জিয়া বলেন, আমি জানি ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী। কিন্তু ওদের কৃত অপরাধ চিকিৎসা সমাজের জন্য এক বিভীষিকাময় কলঙ্ক। এই কলঙ্কের কথা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের জানা উচিত, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওদের বিচার হওয়া উচিত এবং যাতে এভাবে স্বজন হারানোর জ্বালা ভবিষ্যতে কাউকে সহ্য করতে না হয়।

ইউনাইটেড করোনা টপ নিউজ মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর