গণমাধ্যম নয়, দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন: টিআইবি
২ মে ২০২০ ২৩:৩০
ঢাকা: নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার ও সরকারের গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অপরিহার্য নিয়ামক গণমাধ্যমের অবাধ ও মুক্ত ভূমিকা পালনে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (৩ মে) জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে শনিবার (২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এইসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারিকে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করার পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত তাদের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শক্তি হতে পারে মুক্ত গণমাধ্যম। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ নয়। এই দুর্যোগে অতীব প্রয়োজনীয় সরকারি ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার যোগসাজস ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ বিকাশের সুযোগ গ্রহণকারীদের নিবৃত করতে তথ্যের অবাধ প্রকাশের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অবারিতভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা আত্মঘাতী হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।’
বিবৃতিতে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে সংকটের সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ও স্বাস্থ্যসুরক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহ সচল রাখতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের মাধ্যমে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিবর্তনমূলক নজরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা, হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখা ও সাংবাদিকদের সেল্ফসেন্সরশিপে বাধ্য করার প্রয়াসে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ড. জামান বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। করোনা দুর্যোগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বরং অভাবিত এ সংকটে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ফ্রন্টলাইনে গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই। এবং সেইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ ও এর কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপদকালীন ঝুঁকিভাতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
ড. জামান আরও বলেন, ‘ধারণাতীত এ দুর্যোগের সময়ে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তথ্য সংগ্রহ ও সংবাদ প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের অনতিবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার আওতায় এনে গণমাধ্যম-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে সচেষ্ট হবার জোর আহবান জানাই।’
বিবৃতিতে একইসঙ্গে নৈতিকতা, বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সকল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের দায়িত্ব পালন করার আহবান জানিয়েছে টিআইবি।