Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণস্বাস্থ্যের কিট: দেশে রেজিস্ট্রেশন না হলে বিদেশে হবে!


৩ মে ২০২০ ১৭:১১

ঢাকা: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ নির্ণায়ক ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’-এর রেজিস্ট্রেশন বা অনুমোদন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে গেলেও কিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নন এর উদ্ভাবকরা। বরং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কিটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন। আপাতত তাদের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনে কিট উৎপাদন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা। কোনো কারণে সেটি না হলে বিদেশি রাষ্ট্র, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে কিটের স্বত্ব হস্তান্তর করবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দেওয়া অনুমতি অনুযায়ী এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নথি, প্রটোকল, প্রেয়ার (আবেদনপত্র) ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক কিট হস্তান্তর করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের তিন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল, ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও ড. নিহাদ আদনান শনিবার (২ মে) বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’র গবেষণা প্রটোকল জমা দিল গণস্বাস্থ্য

অন্যদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। এই কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কিটের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা চান, আইসিডিডিআর,বি-ও কিটের এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশন করুক। কিট নিয়ে যত বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, এর গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে বলে মনে করেন তারা। কিন্তু বিএসএমএমইউয়ের মতো ‘বড়’ প্রতিষ্ঠান এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের দায়িত্ব নেওয়ায় ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন সত্ত্বেও আইসিডিডিআর,বি গণস্বাস্থ্য কিটের এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশন করতে চাচ্ছে না।

সূত্রগুলো বলছে, নানা টানাপোড়েন সত্ত্বেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আশায় বুক বেঁধে আছেন, বিএসএমইউ থেকে এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশন রিপোর্ট পাওয়ার পর খুব দ্রুততার সঙ্গে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ কিটের রেজিস্ট্রেশন দেবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর তারা দ্রুত উৎপাদনে যাবেন। প্রথম অবস্থায় তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ কিট।

আরও পড়ুন- অবশেষে ইংল্যান্ড থেকে এলো গণস্বাস্থ্যের রিএজেন্ট

এ প্রসঙ্গে ড. বিজন কুমার শীল সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। আশা করি আমরা দ্রুতই রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাব। সবকিছুরই একটা প্রসিডিউর আছে। প্রসিডিউর শেষ হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র পরীক্ষায় আমরা পাস করব। ড্রাগস (ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর) থেকে রেজিস্ট্রেশনও হয়ে যাবে— এটা আমাদের বিশ্বাস। আমরা এই মুহূর্তে নেতিবাচক কিছু ভাবতে চাই না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই বিশ্বাস ও আশাবাদের বিপরীত ভাবনাটাও কাজ করছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের মাথায়। তারা এরই মধ্যে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের স্বত্ব নিয়ে আলোচনা করে রেখেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সিডিসি’কে আটশ কিট হস্তান্তর করবে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও কিট সরবরাহ করার চিন্তা-ভাবনা আছে তাদের।

আরও পড়ুন- গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষার খরচ দেবে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন

সূত্রমতে, বাংলাদেশে সরকারের অনুমোদন না পেলে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের স্বত্ব অন্য কোনো দেশ, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে বিক্রিতে বাধা থাকবে না গণস্বাস্থ্যের। তারা চাইলে যে কারও কাছে এই কিটের মেধাস্বত্ব বিক্রি করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা যায়, ২০০৩ সালে ড. বিজন কুমার শীল উদ্ভাবিত সার্স ভাইরাসের র‌্যাপিড টেস্ট পদ্ধতির রেজিস্ট্রেশন করেছিল চীন। ড. বিজন অবশ্য সে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন সিঙ্গাপুরের ল্যাবে।

তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা চান, বাংলাদেশে উদ্ভাবিত কিট বাংলাদেশের মানুষের জন্যই ব্যবহার হোক। এর সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করুক। তাদের মতে, করোনায় বিধ্বস্ত পৃথিবীতে এই মুহূর্তে দুই কোটি সেলুলজিক্যাল র‌্যাপিড টেস্ট কিটের চাহিদা রয়েছে। জরুরিভিত্তিতে তারা অন্তত দশ লাখ কিট উৎপদন করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন না পেলে বাইরের দেশ এ কিটের রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। তাতে কোনো বাধা থাকবে না। আর করোনা প্রকোপ খুব দ্রুত যাচ্ছে না। সেলুলজিক্যাল কিটের প্রয়োজনীয়তাও শেষ হবে না। সুতরাং আমরা কিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নই। তবে আমরা চাই এটা বাংলাদেশের মানুষের কাজে লাগুক।’

আরও পড়ুন- ‘গণস্বাস্থ্যের কিটে শতভাগ নির্ভুল টেস্ট, সময় লাগবে ৫ মিনিট’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সিডিসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরানসহ অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাংলাদেশ সরকার যদি আমাদের কিট না নেয়, তাদেরকে (বিদেশি দেশ ও প্রতিষ্ঠান) দিতে কোনো অসুবিধা থাকবে না। তবে আমরা এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য বানিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

বিশ্বমহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর পরই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে একদল গবেষক কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। গবেষক দলের অন্যরা হলেন— ড. ফিরোজ আহমেদ, ড. নিহাদ আদনান, ড. মো. রাইদ জমিরুদ্দিন ও ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।

আইসিডিডিআরবি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর করোনা পরীক্ষা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট ড. বিজন কুমার শীল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্যাটেন্ট বিএসএমএমইউ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর