করোনা দুর্যোগে মানুষের পাশে মুকতাদির-মুবাশশিররা
৩ মে ২০২০ ১৮:০৩
ঢাকা: তখন তারা স্কুলছাত্র। বাবার পকেট আর মায়ের আঁচলের গিঁট তাদের আয়ের উৎস। বন্ধুদের সঙ্গে ফুচকা-বাদাম-আইসক্রিম-বার্গার খাওয়ার অর্থ ওই দুই উৎস থেকেই আসে। এক সময় তাদের মনে হলো— এই আড্ডা, এই আইসক্রিম-ফুচকা খাওয়ার আনন্দের চেয়েও নির্মল আনন্দ জগতে আছে! আর সেটা হলো- নিরন্ন, ছিন্নমূল মানুষ তথা আর্ত মানবতার সেবায় কিছু করা!
কিছু করতে হলে তো সংগঠিত হতে হবে! সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে থেকে করতে হবে— এ রকম চিন্তা-ভাবনা থেকেই নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৯ সালে কয়েক বন্ধু মুকতাদির-মুবাশশিররা মিলে গড়ে তোলে ‘আহ্বান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হচ্ছে পীড়িত মানুষের সেবা, দেশের সংকট-দুর্যোগে এগিয়ে আসা।
মুকতাদির-মুবাশশিররা এখন মোটামুটি বড়। কেউ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কেউবা পড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারও বাবা সাংবাদিক, কারও বাবা সরকারি চাকরিজীবী, কারও বাবা ব্যবসায়ী! আর ওরা সবাই স্বপ্নবাজ সাহসী তরুণ!
এই সাহসী তরুণদের ছোট ছোট হাত করোনা দুর্যোগে অনেক বড় একটি কাজ করে ফেলেছে। প্রায় ছয় লাখ টাকার ফান্ড তৈরি করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে তারা। লকডাউনের কারণে কাজ হারানো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ‘আহ্বান ফাউন্ডেশন’র স্বপ্নবাজ তরুণেরা।
ঘরবন্দি নিম্ন আয়ের মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। নিজেদের কাঁধে বয়ে নেওয়া খাদ্যসামগ্রী বিপদগ্রস্থ মানুষের হাতে তুলে দিয়ে হৃদয়ে অনুভব করছে অনাবিল আনন্দ! দেড় শতাধিক রোজাদারের জন্য ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে অপার্থিব সুখ খুঁজে নিচ্ছেন তারা!
রোববারও রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও, মিরপুর ও মগবাজার এলাকায় বসবাস করা বা আটকে পড়া শিক্ষার্থী, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের কর্মহীন মানুষের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছে ‘আহ্বান ফাউন্ডেশন’। যে উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, সয়াবিন তেল, আলু, লবণ, বিস্কুট, সাবান ও মশলাসহ বিভিন্ন উপকরণ। এসব দ্রব্য সামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুকতাদির রুহান, সহকারী প্রধান (মানবসম্পদ বিভাগ) মাহি মুবাশশির হাসান, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ আউয়াল, সংগঠন কর্মী ইমরান, ইশমাম ও সাদমান।
মাহি মুবাশশির হাসান সারাবাংলাকে জানান, এবার ‘ডোনেট ফর সারভাইভারস’ প্রকল্পের অধীনে এফসি আই বিডি’র সহযোগিতায় প্রায় সাতশ’ পরিবার ও ব্যক্তিকে সাহায্য করা হয়েছে। এছাড়াও সংগঠনটির উদ্যোগে ‘ফিস্ট ফর দ্যা ফ্যামিলিস’ প্রকল্পের অধীনে রমজানে ১৫০টি পরিবারে সেহরি ও ইফতার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। করোনা সংকটে এবারের সহযোগিতা অতীতের ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।
করোনা সংকট শুরুর দিকে ‘আহ্বান ফাউন্ডেশন’ আরও কয়েকশ’ পরিবারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে বলে জানান মাহি মুবাশশির হাসান।
আহ্বান ফাউন্ডেশন করোনা দুর্যোগ মানুষের পাশে মুকতাদির-মুবাশশিররা