করোনায় ঝুঁকিতে এডিপি বাস্তবায়ন, মার্চ পর্যন্ত অগ্রগতি ৪৫%
৩ মে ২০২০ ২২:৪৯
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির প্রভাব পড়ছে প্রায় সবক্ষেত্রেই। করোনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে- এটা ধরেই নেওয়া যায়। এই ভাইরাসটির বিস্তার রোধে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশে কার্যত লকডাউন চলছে। এতে থমকে গেছে পুরো বাংলাদেশ। ফলে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন।
গত মার্চ পর্যস্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ। সেই হিসেবে এবছর নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বাস্তবায়ন হার কমেছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। এখনো এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে ৪৬ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তবে করোনার মধ্যেও এগিয়ে রয়েছে চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগিয়ে থাকদের মধ্যে সর্বোচ্চ বাস্তবায়নে হার নির্বাচন কমিশনের ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সর্বনিম্ম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন পায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)। এরপর থেকেই লকডাউনের কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। এডিপিভুক্ত ১ হাজার ৮৪৭টি প্রকল্পের কার্যক্রম ঠিক মতো পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী জুনের মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কেননা গত নয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করেছে ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। আর সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন অবশ্যই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটি খুবই স্বাভাবিক। কেননা লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রায় সবগুলো প্রকল্পের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু প্রকল্পের বাকি থাকা বিল পরিশোধ করা হলে এডিপির অগ্রগতি হয়তো কিছুটা বাড়বে। তাছাড়া এখনও মে ও পুরো জুন বাকি রয়েছে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে প্রকল্পের কিছু কাজ হবে।’
নাজুক অবস্থা থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
আইএমইডি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নে করুন অবস্থা বিরাজ করছে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, লেজিসলেটিড ও সংসদবিষয়ক বিভাগ ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ২১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে
এডিপি বাস্তবায়নে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৬৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ,অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ৮৯ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৬৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
৫০ শতাংশের নিচে থাকা কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপির অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কম সেগুলোর কয়েকটি হচ্ছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, সেতু বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ।