Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপলস লিজিংয়ে আটকে রয়েছে গ্রাহকের ২ হাজার কোটি টাকা


৪ মে ২০২০ ০৮:১৭

ঢাকা: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (পিএলএফসিএল) আটকে রয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এই টাকা গ্রাহকরা কবে পাবেন কিংবা আদৌ পাবেন কি না, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

এদিকে, গ্রাহকের দুই হাজার টাকা পাওনার বিপরীতে এখন পর্যন্ত পিপলসের কাছে জমা আছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। ফলে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে হলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের পাওনা টাকা আদায় করতে হবে। আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের মধ্যে তা অনুপাতিক হারে পরিশোধ করা হবে। কবে থেকে আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে, তাও নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের টাকা কবে থেকে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, পিপলসের স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার মতো হবে। ফলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হলে আগে পিপলসের পাওনা টাকা উদ্ধার করতে হবে। এই পাওনার টাকার প্রায় পুরোটাই খেলাপি হয়ে আছে। আমাদের এখন প্রধান কাজ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের ঋণ বাবদ পাওনা টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকদের মাঝে ফেরত দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পিপলসের প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো নগদ টাকা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা অবসায়নের পর উদ্ধার করা হয়েছে।

পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগকারীর পাওনা

বর্তমানে পিপলস লিজিংয়ের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি সংগঠন এবং ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪২১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— ইন্ট্যারন্যাশনাল লিজিং (২২৭ কোটি টাকা), রিলায়েন্স ফাইন্যান্স (৬১ কোটি টাকা), বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স (৫৫ কোটি টাকা), প্রিমিয়ার লিজিং (৪০ কোটি টাকা), ফারইস্ট ফাইন্যান্স (২৮ কোটি টাকা) ও এফএএস ফাইন্যান্স (১০ কোটি টাকা)।

অন্যদিকে আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের আমানত বাবদ পাওনা ৪১০ কোটি টাকা।এর মধ্যে  রুপালি ব্যাংক পাবে ১২২ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ৪৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৩৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৩৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ১৪৪ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫ কোটি টাকা পাবে।

এছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আমনত আটকে পড়েছে পিপলস লিজিংয়ের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, কাজী ফার্মস, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমএ)। এছাড়াও ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর প্রায় সাতশ কোটি টাকার আমানত পিপলস লিজিংয়ে আটকে রয়েছে।

পিপলসের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

২০১৯ সালের  সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ছয় মাস পিপলস লিজিং নিরীক্ষা করে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষার সময় ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার বছরের আয় ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে গত ১০ মার্চ আদালতে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও গত ১২ মার্চ ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পিপলসের দায়িত্বে থাকা ৩৮ জনে পরিচালকদের একটি তালিকা আদালত জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপলসের কাছে বিভিন্ন গ্রাহকদের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।

পিপলসের বর্তমান সম্পদ

পিপলস লিজিংয়ের সম্পদ (অ্যাসেট) বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের দুইটি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ১৫ কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলসের অবসায়নের আবেদন করে। গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় সে আবেদন অনুমোদন করলে ১০ জুলাই অবসানের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপর ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা তোলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফসিএল) বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমএ) বাংলাদেশ ব্যাংক বিজিএমইএ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর