Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার প্রভাব: ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এপ্রিলে


৫ মে ২০২০ ০৮:১৬

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। গত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা দেশে ১০৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দেশে ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ রেমিট্যান্স আসে। ওই সময়ের পর গত এপ্রিলে দেশে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এলো। যা গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে এপ্রিল মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল ৩ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি ব্যয় কমার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও রিজার্ভ বেড়েছে।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অধিকাংশ প্রবাসী লকডাইনে রয়েছে। অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না। আবার কেউ বেতন পেলেও টাকা দেশে পাঠাতে পারছে না। এসব কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এমনকি চলতি বছরে ৬/৭ লাখ প্রবাসী দেশে ছুটিতে এসে আর যেতে পারেনি। এর ফলেও রেমিট্যান্স কমেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। কারণ অর্থ খরচ না হলে রিজার্ভ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-১৯ থেকে এপ্রিল-২০) প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ (১ ডলার, ৮৫ টাকা ধরে) ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে (জুলাই-১৮ থেক এপ্রিল-১৯) রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৩৩০ কোটি ২৯ লাখ ডলার।

সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার, রাজস্ব আয়, রফতানি প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির সব সূচক উল্টোপথে হাঁটলেও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্থিও এনে দিয়েছিল। এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত আড়াই বছর পর আবারও ১ মার্চ তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। এই রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু করোনার কারণে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালের প্রথম থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৫৯ দশমিক ৭২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ১৩১ দশমিক ৭৭, মার্চে ১৪৫ দশমিক ৮৬, এপ্রিলে ১৪৩ দশমিক ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অসে। এরপর মে মাসে আবার রেকর্ড পরিমাণ ১৭৪ দশমিক ৮১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। এরপর গত জুনে ১৩৬ দশমিক ৮২ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই ২০১৯) রেমিট্যান্স আসে ১৫৯ দশমিক ৭৬ কোটি মার্কিন ডলার, আগস্টে ১৪৪ দশমিক ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৪৭ দশমিক ৬৯ কোটি মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৬৩ দশমিক ৯৬ কোটি এবং নভেম্বরে ১৫৫ দশমিক ৫২ কোটি, ডিসেম্বরে ১৬৮ দশমিক ৭০ ডলার। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ দশমিক ২০ কোটি ডলার, মার্চে ১২৮ দশমিক ৬০ কোটি ডলার এবং এপ্রিলে ১০৪ দশমিক ১ কোটি মার্কিন ডলার।

বছরভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসাবে ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এছাড়া ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।

অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।

২০১৯-২০ অর্থবছর এপ্রিল করোনার প্রভাব রেমিট্যান্স সর্বনিম্ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর