Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইন মেনে হাতকড়া, সাংবাদিক কাজলকে আমরা অসম্মান করিনি: পুলিশ সুপার


৪ মে ২০২০ ১৯:৫৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: দিনটি ছিল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমগুলোয় দিনটির আলোচনা যখন নানাভাবে, ঠিক তখনই আরেকটি নতুন খবর আসে। প্রায় দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ঢাকার ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান মিলেছে যশোরের বেনাপোলে। হয়ত তিনি পরিবারের কাছে ফিরবেন। আপাতত এমন খবরটি ছিল সুখকর। যদি এমন হতো, তাহলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এটি সাংবাদিক সমাজের কাছে হতো ‘সোনায় সোহাগা।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু অনুপ্রবেশ আইনে মামলা, বেনাপোল থানায় কয়েকঘণ্টা গ্রেফতার রাখার পর হ্যান্ডকাফ দিয়ে পিঠমোড়া করে আদালতে তোলার ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় হাতকড়া পরিয়ে ওই সাংবাদিককে আদালতে তোলা হয়েছে সেটি আইনসম্মত ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনা উঠেছে।

তবে যশোরের পুলিশ বলছে হাতকড়া পরানোর বিষয়টি আইনসম্মত ছিল। তারা আইনের বাইরে কিছু করেননি।

এ বিষয়ে কথা হয় বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খানের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিজিবি এই মামলার বাদী। পাসপোর্ট ছাড়া তিনি ভারত থেকে দেশে এসেছেন। আইনের চোখে তিনি একজন আসামি। সুতরাং আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিতে হবে, এটিই নিয়ম। আমরা তো আইনের বাইরে কিছু করিনি।’

ওসি আরও বলেন, ‘আগে হাতকড়া সামনের দিকে পরানো হতো। এখন পেছনের দিকে পরানোর নিয়ম। হাত সামনে রেখে হাতকড়া পরানো দেখেই আমরা এতদিন অভ্যস্ত, তাই এই বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। হাতকড়া কোথায় পরাতে হবে আইনেই আছে। আইনে না থাকলে আমরা কি এভাবে হাতকড়া পরাতাম?’

হাতকড়া পরানোর বিষয়ে প্রায়ই একই ধরনের ব্যাখ্যা দেন যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইন মেনেই শফিকুল ইসলাম কাজলকে হাতকড়া পরানো হয়েছে। আমি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। আদালতে আসামি তোলার সময় হাতকড়া পরিয়ে নিতে হবে, এটি পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশে (পিআরবি) আছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ছবি দেখে তো অনেক সময় প্রকৃতচিত্র বোঝা সম্ভব নয়। পিঠের দিকে হাতকড়া পরানো হলেও তা অতটা শক্ত করে বাঁধা ছিল না। এছাড়া তিনি সাংবাদিক এবং যথেষ্ট বয়স্ক, আমরা আইন মেনেই তাকে হাতকড়া পরিয়েছি। তাকে কোনোভাবে অসম্মান করিনি। আমাদের কাছ থেকে তিনি যথেষ্ট সম্মানই পেয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

এসপি আরও বলেন, ‘যেভাবে হাতকড়া পরানো হয়েছে, তা ঠিকই আছে। আগে দেখা যেত আসামির একহাতে হাতকড়া, বাকি অংশ ধরে রাখতেন একজন পুলিশ সদস্য। আমরা এরকম কোনো ঘটনা জানতে পারলে সে শোকজ খায় এবং তার বিরুদ্ধে কিছুটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখন হাতকড়া পরানোর নিয়ম এটিই।’

এ সময় পুলিশ সুপার দাবি করেন, বিজিবি যখন শফিকুল ইসলাম কাজলকে বেনাপোল থানায় সোর্পদ করে তখন ওভাবেই হাতকড়া বিজিবি পরিয়েছিল। তারা বিজিবির কাছ থেকে পিঠমোড়া অবস্থাতেই কাজলকে পেয়েছিলেন।

এদিকে পিআরবি নিয়ে পুলিশের এমন ব্যাখ্যায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও হাইকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে কাউকে শারীরিক কিংবা মানসিক নিপীড়ন করা যাবে না। যশোরের পুলিশ শফিকুল ইসলাম কাজলের সঙ্গে যা করেছেন, তা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এটি কোনোভাবেই করা যাবে না। এভাবে হাতকড়া পরানোর ঘটনা অসম্মানজনক।’

‘পিঠমোড়া করে হাতকড়া পরাতে হবে, এটি নাকি আইনে আছে’- এ বিষয়টি উল্লেখ করলে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় পুলিশ পিআরবি আইনের অপব্যাখ্যা দিয়েছে। রাষ্ট্র ক্রমশ উদার ও মানবিক হচ্ছে, আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই। আগে হাতকড়া দিয়ে হাত বাঁধা হতো, এখন পিঠমোড়া করে বাঁধবে- এটা বিশ্বাস করা যায় না। রাষ্ট্র এতটা পিছিয়ে যাবে? যারা এই আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

যশোর আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবী মাহমুদুল হাসান ‍বুলু। তিনি বলেন, ‘কাজলের বিরুদ্ধে যে আইনে মামলা হয়েছে, সেটি খুবই সাধারণ একটি মামলা। এই মামলায় এভাবে তাকে হাতকড়া পরিয়ে আনা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। খুব সিরিয়াস মামলা, আসামি পালিয়ে যেতে পারে, ছিনতাই হতে পারে- এরকম আশঙ্কা থাকলে অন্য ব্যাপার। কিন্তু সাংবাদিক কাজল এবং তার বিষয়টি পরিচিত ঘটনা। তার সঙ্গে পুলিশের এই আচরণ অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সে তো সাংবাদিক। কোনো ক্রিমিনাল না। তাকে কেন হাতকড়া পরাতে হবে? এভাবে সাংবাদিকদের হাতকড়া পরানো কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। একজন আইনজীবী হিসেবে বলব, এটি সৌজন্যমূলক হয়নি।’

পুলিশের এমন আচরণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি-মিডিয়া সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো আসামির বেলাতেই আইনি পরিধির মধ্যে সম্ভবপর মানবিক আচরণ ও সম্মানজনক আচরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমরা আশা করতে পারি, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ বিষয়গুলো মেনেই তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে।’

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। এ ঘটনায় ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী। পাসপোর্ট আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন হলেও ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে নেওয়া হয়।

ঢাকায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন-

নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক কাজলের সন্ধানে অনলাইনে প্রতিবাদ

নিখোজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বেনাপোলে গ্রেফতার

পাসপোর্ট আইন বেনাপোল শফিকুল ইসলাম কাজল সাংবাদিক সাংবাদিক কাজল হাতকড়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর