৩১ মে’র আগে লকডাউন প্রত্যাহার করা উচিত হবে না: নির্মূল কমিটি
৪ মে ২০২০ ২১:৫৭
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহাসংকট মোকাবিলায় জাতীয় সম্মেলনের পুরো তহবিল বিপন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। পাশাপাশি সংগঠনটি বলছে, কোনো ভাবেই ৩১ মে’র আগে লকডাউন প্রত্যাহার করা উচিত হবে না। এই বিষয়ে জনমত তৈরির ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশে ও বিদেশের ৪৫টি শাখা রোববার (৩ মে) এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছে। ওই সম্মেলনে ছয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলা হয়।
নির্মূল কমিটি জানিয়েছে, রোববার (৩ মে) শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশে ও বিদেশের ৪৫টি শাখা এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে।
সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুই পর্বের এই স্কাইপ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। দ্বিতীয় পর্বের প্রধান বক্তা ছিলেন চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় নির্মূল কমিটির চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি’।
সম্মেলনে নির্মূল কমিটির কেন্দ্র ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বহির্বিশ্বের শাখাসমূহের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও ভারতীয় শাখার নেতৃবৃন্দ মূল বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাবিরোধী যুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর একাংশের নতুন আত্মপ্রকাশের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিজনিত বিরাজমান মহাসংকটের কারণে মার্চ ২০২০-এ অনুষ্ঠিতব্য নির্মূল কমিটির জাতীয় সম্মেলন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সম্মেলনের পুরো তহবিল করোনা মহামারির কারণে বিপন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
করোনা মহামারি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেশে সরকার, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও নাগরিক সমাজ কী করছে এ সবের পাশাপাশি দেশে দেশে সংকট মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার উদাহরণসমূহ তুলে ধরার জন্য নির্মূল কমিটি সাপ্তাহিক ‘জাগরণ’ নামে একটি বহুভাষিক অনলাইন বুলেটিন প্রকাশ করবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এই বুলেটিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-নাগরিক সংগঠন করোনা মহামারি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে তখন ’৭১-এর গণহত্যাকারী মৌলবাদী সাম্প্রাদায়িক জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা কিছু সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশ নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশ ও এই জাতির মহা দুর্যোগকালে মানুষকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্য মৌলবাদী সন্ত্রাসী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের এ ধরনের তৎপরতার ওপর কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার সংগ্রাম অব্যাহত আহ্বান জানাচ্ছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
আরও বলা হয়, করোনা মহাসংকট মোকাবিলার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসচ্ছল কর্মজীবী মানুষের জন্য যে বিশাল প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা প্রত্যন্ত এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নিকট পৌঁছাচ্ছে কি না এবং এই ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে কি না তার ওপর নজরদারি এবং স্বাস্থসেবা ও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সব রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমরা নির্মূল কমিটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চলমান লক ডাউন প্রত্যাহারে জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সরকার ও প্রশাসনের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র এখন পর্যন্ত এই মহামারীর বিস্তার ঘটছে। আমরা মনে করি কোনো ভাবে ৩১ মে’র আগে লক ডাউন প্রত্যাহার করা উচিত হবে না। এই বিষয় জনমত তৈরির ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যারা অকালে প্রয়াত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবার পাশাপাশি যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।