নো ম্যানস ল্যান্ডের সেই নারীকে রেড ক্রিসেন্টের কাছে হস্তান্তর
৪ মে ২০২০ ২১:৫০
খাগড়াছড়ি: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) একমাসেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করা মানসিক ভারসাম্যহীন শাহনাজ পারভিনকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রেড ক্রিসেন্ট তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছে।
সোমবার (৪ মে) বিকেল ৪টার সময় রামগড় সীমান্ত এলাকায় শাহনাজ পরভিনকে হস্তান্তর করা হয়। ফেনী নদীর মাঝখানে, তথা নো ম্যানস ল্যান্ডে ২ এপ্রিল থেকে পড়েছিলেন শাহনাজ। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাকে ভারত থেকে ঠেলে পাঠিয়েছিল।
‘ওই নারী’কে ভারত থেকে নো ম্যানস ল্যান্ডে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ-ই
বিজিবি গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সেলিম জাহান ও ৪৩ রামগড় বিজিবি জোন কমান্ডার কর্নেল তারিকুল হাকিম ওই নারীকে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ি ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, ইউনিট অফিসার আবদুল গণি মজুমদার, পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন কর্মকর্তা মাহবুবুল হকের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন বিপদ-আপদে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস মানুষের জন্য কাজ করে। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শাহনাজ পারভিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, আগে সেটি পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় আজ আমরা তাকে গ্রহণ করেছি। আশা করছি, কাল (মঙ্গলবার) বিকেলের মধ্যে তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল সকালে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুশ-ইনের চেষ্টা রুখে দেয় বিজিবি। এ অবস্থায় প্রায় ১৬ দিন ধরে ওই নারী বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ফেনী নদীর মাঝখানে তথা নো ম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশে নিচে অবস্থান করেন। এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে তিন দফায় বৈঠক হলেও আসেনি সমাধান।
সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী তার ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। কখনো তিনি বলেছেন তার বাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম থানার দোলবাড়ি এলাকায়, কখনো বলেছেন হরিণা এলাকায়, কখনো বলেছেন কুড়িগ্রাম জেলার রইখারচর এলাকার কথা। বিজিবি-বিএসএফ তার দেওয়া তথ্য ধরে ঠিকানা শনাক্ত করার কাজ শুরু করে। এ নিয়ে গণামধ্যমে খবর প্রচারিত হলে বিষয়টি রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের নজরে আসে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
পরে শাহনাজ পারভিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা শাহনাজ পারভিনকে শনাক্ত করলে তাকে নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ অংশে নিয়ে আসা হয়। ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীকেও বিষয়টি জানানো হয়।
৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, রামগড় জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম বলেন, তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে আমরা আমাদের হেফাজতে রেখেছিলাম। দুই বছর ধরে তিনি ভারতে ছিলেন। তবে কেন ছিলেন, কিভাবে গিয়েছিলেন, তা তিনি বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, তাকে আমরা রেড ক্রিসেন্টের কাছে হস্তান্তর করেছি। তারা আগামীকালের মধ্যেই তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে বলে আশা করছি। পুরো প্রক্রিয়াটিতে সহযোগিতা করার জন্য তিনি আইসিআরসি, বিডিআরসিএস ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।