Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক: পরিবহন খাতে ক্ষতি অর্ধ কোটি টাকা


৬ মে ২০২০ ০৮:৪৬

রাঙ্গামাটি: দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। জরুরি পরিষেবা, উৎপাদনমুখী বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার, মুদি ও ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব খাতই এখন পর্যন্ত বন্ধ। একইসঙ্গে গণপরিবহনও বন্ধ থাকায় যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরা, তেমনি কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংকটে জীবনযাপন করছেন খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীরা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধের পর থেকে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পরিবহনখাতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এই সড়কে প্রতিদিন ২৯টি পাহাড়িকা সুপার সার্ভিস ও ২৮টি দ্রুত সার্ভিস বাস যাতায়াত করে। প্রতিটি পাহাড়িকা বাসে গড়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকার টিকেট বিক্রি হয়। সে হিসাবে পাহাড়িকা থেকে মোটর-মালিক সমিতির প্রতিদিন আয় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর গত একমাসে এই পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ৪২ লাখ টাকার টিকেট বিক্রি হয়নি তাদের।

এদিকে, দ্রুতযান সার্ভিস নামের আরেক গাড়ি থেকে প্রতিদিন ভাড়া ওঠে গড়ে ২২০০-২৬০০ টাকা। এই গাড়ির প্রতিদিনের ২৮ ট্রিপ থেকে মালিক সমিতি ভাড়া আদায় করত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এই গাড়ি বাবদও গত একমাসে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে মালিক সমিতি। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতি তাদের।

মালিক সমিতি সূত্রগুলো বলছে, এ সড়কে চলাচলকারী প্রতিটি পরিবহনে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারসহ কমপক্ষে তিন জন কর্মরত থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন কাউন্টারসহ মোট কর্মরত আছেন প্রায় সাড়ে ১২শ শ্রমিক-কর্মচারী। করোনাভাইরাসের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা সবাই পড়েছেন সংকটের মুখে। প্রত্যেককেই পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা ভাত জোটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি মোটর মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহন মালিকদের জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সাড়ে চারশ শ্রমিক-কর্মচারীকে ত্রাণও দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৬ মে) শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ১২শ শ্রমিককে জনপ্রতি ১২শ টাকা করে দেওয়ার কথাও রয়েছে।

কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ মার্চ থেকে পুরো একমাসের বেশি সময় ধরে কর্মহীন জীবনযাপন করছেন তারা। প্রতিদিনের রোজগারের উৎস বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের হাতে কিছু টাকা সঞ্চয় থাকলেও সেগুলো এখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনের সময়টাতে তাদের আরও কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়াতে হবে।

রাঙ্গামাটি শহরের বাসিন্দা কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, প্রশাসনসহ বিভিন্নভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু এই সামান্য ত্রাণে খুব বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারছেন না তারা। কেউ কেউ ত্রাণ পাননি বলেও অভিযোগ করছেন। এ পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন এগিয়ে আসলে দুর্দিনের দুঃসহ বেদনা কিছুটা হলেও লাঘব হতো বলে মন্তব্য তাদের।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ২৬ মার্চ থেকে একমাসের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে পরিবহন খাতের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারসহ সবাই কর্মহীন। পুরো একমাসে ভাড়া বাবদ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আমাদের। প্রতিদিনেই ক্ষতির পাল্লা ভারি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পরিবহন খাতে যারা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাদের অনেককেই প্রতিদিনের রোজগারের ওপর নির্ভর করেই দিনযাপন করতে হয়। এখন এই সাধারণ ছুটির মধ্যে মালিক-শ্রমিক সবাই বিপদে পড়েছেন। আমরা এ পর্যন্ত এ সড়কের সাড়ে চারশ শ্রমিক-কর্মচারীকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান রোমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৬ মার্চ থেকে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সব সড়কেই সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে করে পরিবহন খাতের কর্মচারীদের ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সবাই সমানভাবে এগিয়ে না এলে এই সংকট কাটিয় ওঠা যাবে না।

ক্ষতি পরিবহন রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর