ঢাকা: করোনাভাইরাস সংকট পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের (৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়) তুলনায় এর আকার প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১১ জুন (বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এই বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। গত বছরের ১৩ জুন তিনিই সংসদে বাজেট উত্থাপন করেছিলেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে পুরো বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার পক্ষ থেকে বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন।
সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বাজেট প্রণয়নের কাজের কারণে ছুটি ভোগ করতে পারছেন না। পাশাপাশি প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলে প্রাক-বাজেট আলোচনা চললেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে তা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সে ঘাটতি পূরণে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটকে অংশগ্রহণমূলক করতে অনলাইনে সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতামত দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে (https://mof.gov.bd) গিয়ে জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ প্রণয়নে মতামত/পরামর্শ (https://mof.gov.bd/forms/form/fb) অপশনে ক্লিক করলেই যে কেউ বাজেট নিয়ে তার মতামত দিতে পারছেন। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে অনলাইনে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের আকার প্রথমে ৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা হলেও আকার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী প্রথমে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের প্রস্তাব আসে। পরে আরও কমিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয় বাজেটের আকার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেটই পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী।
সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। উন্নয়ন বরাদ্দের মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থ থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি মোকাবিলায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই দুই খাতে থাকছে বিশেষ প্রণোদনা। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাকে দেওয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব।
এছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া লাখ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত করা নিয়েও থাকছে বিশেষ দিক নির্দেশনা। বাজেটে জরুরি খাত ছাড়া অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না। করোনা পরবর্তী সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও রাখা হবে।