Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়োজন-আড়ম্বর নেই, সুনসান বৌদ্ধ মন্দির


৬ মে ২০২০ ১৬:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোনো ধরনের আড়ম্বর ছাড়াই পালিত হচ্ছে বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও নেই মন্দিরে-মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা, সম্মিলিত প্রার্থনা, শোভাযাত্রা-ফানুস উড়ানোর আয়োজন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকার মন্দিরগুলো একেবারেই সুনসান। ধর্মীয় নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে এবার বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনটি যেভাবে পার হচ্ছে, ইতিহাসে এমন নজির আর মেলে না।

বিজ্ঞাপন

গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্বলাভ ও বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ— এই তিন স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বৈশাখী পূর্ণিমা, যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছেই বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে পরিচিত। প্রতিবছর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে থাকেন।

এবার আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে বিভিন্ন বিহারে নিয়ম রক্ষার প্রার্থনায় অংশ নেন ভিক্ষুরা। তবে কমতি ছিল না বুদ্ধভক্তির আরতি বা নিবেদন। ফলমূল সহকারে প্রসাদ সাজিয়ে রাখা হয় গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে। আর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সবাইকে ঘরে বসে জগত ও জীবের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন ভিক্ষুরা।

চট্টগ্রাম নগরীর ৩১টিসহ জেলার মোট ৩৫৫টি বৌদ্ধ মন্দিরে প্রতিবছর বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর দিনটিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে দিনব্যাপী চলে ত্রিপিটক পাঠ। এছাড়া উপাসক ও উপাসিকাদের দেওয়া হয় পঞ্চশীল ও অষ্টশীল। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় সম্মিলিত প্রার্থনা ও মোমবাতি প্রজ্বলন। দিনব্যাপী এই আয়োজনে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।

আরও পড়ুন- উড়বে না ফানুস: বুদ্ধ পূর্ণিমায় ঘরে বসেই প্রার্থনা

বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষু সংঘরা জানান, প্রতিবছর এই দিনে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্মীয় শান্তি শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সমবেত প্রার্থনা ও বুদ্ধ পূজার মাধ্যমে বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনাও করা হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুরাই কিছু আচার পালন করতে পারছেন। প্রতিবছর এই দিনে পূণ্যার্থী, দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকাদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে বৌদ্ধ বিহারগুলো। তাদের এবার বাড়িতে বসেই পালন করতে হচ্ছে পবিত্র এই ধর্মীয় উৎসবটি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ মে) সকালে নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একেবারেই নিরিবিলি পরিবেশ। ভিক্ষুদের কয়েকজন নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে প্রার্থনা করছেন। মাঝে মাঝে দুয়েকজন ভক্ত গিয়ে প্রসাদ নিবেদন করছেন, মোমবাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছেন।

নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাস্থবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোরে যারা বিহারে এসেছেন, তারা পূজা দিয়ে, ভিক্ষুদের সোয়েং দিয়ে চলে গেছেন। সরকারি নিয়ম মেনে আমরা বুদ্ধ পূর্ণিমা ব্রত পালন করছি। সকলের হিতসুখ মঙ্গল কামনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে এটাই প্রথম যে বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘরাই কেবল বুদ্ধ পূর্ণিমা পালন করছেন। কিন্তু বুদ্ধ যখন জন্ম নেন, তখন বৈশালীতে এক দুরারোগ্য ব্যাধি ও দুর্ভিক্ষ মহামারি দেখা দিয়েছিল। তথাগত বুদ্ধ তখন প্রধান শিষ্য আনন্দকে নিয়ে বৈশালীতে যান। আনন্দকে বুদ্ধের প্রবর্তিত রতন সূত্র পাঠ করতে নির্দেশ দেন। তখন এই সত্য পাঠের ফলে মুষলধারে ভারি বর্ষণে সমস্ত ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়। দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। বুদ্ধ সবসময় দুঃসময়ের পাশে ছিলেন।’

চট্টগ্রামের পরে পাহাড়ের তিন জেলায় বুদ্ধ পূর্ণিমার আয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। দু’দিন ধরে চলে সেই আয়োজন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পাহাড়েও নীরবেই পালিত হচ্ছে বুদ্ধ পূর্ণিমা।

পার্বত্য ভিক্ষুসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও লংগদু বড়াদম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুগত লংকার ভান্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘরা পালন করছে। পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘরাই কেবল উৎসবটি পালন করবেন। আর দায়ক-দায়িকারা বাড়িতে বসেই এই উৎসব পালন করবেন।’

বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে বোধিজ্ঞান বা বুদ্ধত্বলাভ করেছিলেন। আর ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনটিতে বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। সিদ্ধার্থ গৌতমের বুদ্ধত্ব লাভের মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবর্তিত হয়।

গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধ পূর্ণিমা বুদ্ধ পূর্ণিমার আয়োজন বৌদ্ধ মন্দির

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর