Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেসভাড়ার সংকটে রাবির ৩০ হাজার শিক্ষার্থী, মওকুফে রাজি নন মালিকরা


৭ মে ২০২০ ০৮:৩৩

ঢাকা: করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের মেসগুলোও। ফলে টিউশনিসহ অন্যান্য ছোটখাটো চাকরিও হারিয়েছেন অনেকে। তবে মেস বন্ধ থাকলেও ঠিকই ভাড়া গুনতে হচ্ছে রাজশাহী নগরীর মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের। এতে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের দাবি- মেস মালিকরা ভাড়া মওকুফ করুক। তবে মালিকরা তাতে রাজি নন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনায় ভাড়া কমানো যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হল মিলে মাত্র সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় মেস ভাড়া করে থাকতে হয়।

মেসে থাকা রাবির বেশকয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারের সন্তান। করোনাভাইরাসের এই সময়ে মধ্যবিত্ত ও কৃষকরা সবচেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সেজন্য মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফ করা হোক। তবে ভাড়া অর্ধেক কমালেও অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন বলে জানান তারা।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালেরর জন্য বন্ধ। এ অবস্থায় মেস মালিকদের উচিত ভাড়া মওকুফ অথবা শিথিল করা।’

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ তুহিন বলেন, ‘করোনার কারণে মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক শ্রেণির অভিভাবকরা কর্মহীন। আবার টিউশনি করে মেসের ভাড়া ও পড়াশোনার খরচ বহন করা শিক্ষার্থীদেরও আয়ের উৎস বন্ধ। মেস ভাড়া এখন আমাদের কাছে পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আমরা চাই- মেস মালিকরা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন যাতে উভয়পক্ষের জন্য সুবিধা হয়।’

ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইয়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম কুহেলি বলেন, ‘মেস ভাড়া কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমানোর জন্য মালিকদের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভাড়া মওকুফের জন্য মেস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাদের তেমন সাড়া পাইনি। মালিকদের অনেকে বলেছেন, এই ভাড়া দিয়েই তাদের পরিবার চলে। আমরা চেষ্টা করছি, শিক্ষার্থীদের সুবিধা নিশ্চিতে মেস মালিকদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছতে।’ এ ব্যাপারে প্রয়োজনে রাজশাহী সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গার্ডেনিয়া, গ্রিনহাউজ, হোয়াইট হাউজ (ছেলে), হোয়াইট হাউজ (মেয়ে) ও সানফ্লাওয়ার নামের পাঁচটি মেসের মালিক বিনোদপুরের চন্দন আলম। তিনি বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে সকলের মানবিক হওয়া উচিত। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের পক্ষে এই মুহূর্তে মেস ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার বেশিরভাগ মেস মালিকদের সংসার চলে মেসের টাকায়। তাই আমি মনে করি, যাদের ভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না এমন শিক্ষার্থীদের খবর নিয়ে ভাড়া পুরোপুরি মওকুফ করা। আর অন্য সবার কাছে থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়াটা যৌক্তিক।

বিনোদপুর মন্ডলের মোড় এলাকার ছায়ানীড় ছাত্রীনিবাসের মালিক মনজুর মোর্শেদ রকেট বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভাড়া পুরো মওকুফের দাবি মেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমরাও তো মেসের ওপর নির্ভরশীল। তবে কিছুটা শিথিলের পক্ষে আমি। এতে করে শিক্ষার্থী ও মেস মালিক উভয়পক্ষের সন্তুষ্টি থাকবে।’

ভাড়া মওকুফের প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর, কাজলা, মেহেরচন্ডী ও বুদপাড়া এলাকার (বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা) মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের সবাই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা, তা কিন্তু নয়। আবার সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের, তাও নয়। সবার অবস্থা বিবেচনা করে কিছু শিক্ষার্থীর ভাড়া মওকুফ ও কিছু শিক্ষার্থীর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলের পক্ষে আমি। পুরোপুরি মওকুফ করলে মেস মালিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হবে। কারণ তাদের পরিবার চলে মেসের ভাড়ায়।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বসে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান মেস মালিক সমিতির এই নেতা।

মেসভাড়া রাবি সংকট

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর