এবার নেই ঈদযাত্রা, নেই অগ্রিম টিকিটের শোরগোল
১৩ মে ২০২০ ০৮:২৬
ঢাকা: ঈদ এগিয়ে আসছে, তবে প্রথম বারের মতো কোথাও অগ্রিম টিকেটের কোনো শোরগোল পাওয়া যাচ্ছে না। না রেল না বাস বা নৌ-যাত্রায়। এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলছেন পরিবহন যোগাযোগ সংশ্লিষ্টরা। ট্রেন টিকেটের জন্য কমলাপুরে দীর্ঘ লাইন, বাস টিকিটের জন্য গাবতলীতে ভিড় আর নৌযানে যাত্রীভর্তি যাত্রা ছাড়া দেশে ঈদ হবে এবার। এমনকি আকাশপথও বন্ধ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবং সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক ছুটি বাড়ছে। এর আওতায় গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। বছরে দুবার দুই ঈদে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়ে, তবে এবার চোখে পড়ছে না চিরচেনা চিত্র।
এরমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদে কর্মস্থলে থাকার সরকারি নির্দেশ রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব অনুযায়ী ঈদে ঢাকা ছাড়াবার আবার ঢাকায় ফিরে আসার বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সাধারণ ছুটি থাকা অবস্থায় গণপরিবহন না চলারও নির্দেশনা রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের।
এমন অবস্থায় পরিবহন খাতে বড় ধরনের সংকট আসছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেখা গেছে, দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবহন শ্রমিকরা বেকার হয়ে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। রাজধানীতে বাস টার্মিনাল পাহারার বিনিময়ে দৈনিক খোরাকি পাচ্ছেন কিছু পরিবহন শ্রমিক।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঈদযাত্রাসহ দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন বন্ধ থাকায় এ খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, সারাদেশে ২ লাখ বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচল করে স্বাভাবিক সময়ে। ঈদের সময়ে বাসের ট্রিপ বাড়ে। যাত্রী বেশি থাকায় আয়ও হয় বেশি। কিন্তু এবার সেই বাণিজ্যিক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ আয়ও বন্ধ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত ২০ ধরনের গাড়ি আছে ৪৪ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ গাড়ি বাণিজ্যিক। আবার নিবন্ধন ছাড়াও বাণিজ্যিক গাড়ি চলতে দেখা যায়।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন বন্ধ থাকায় দিনে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে । আমরা পরিবহন কোম্পানি থেকে খোরাকি দিচ্ছি শ্রমিকদের।’
বাংলাদেশ বাস ট্রাক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ জানান, তারা এখনো নিশ্চিত নন ঈদের আগে বাস ছাড়তে সরকার দেবে কি না। লকডাউনে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের একই দশা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তার মালিকানাধীন শ্যামলী পরিবহন উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ঈদের আগে-পরে হাজার হাজার বাস ট্রিপ পরিচালনা করে। এমন সময়ে অগ্রিম বাস টিকিট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু এবারে চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।
নৌপরিবহনেরও অবস্থা একই। সদরঘাট ফাঁকা পড়ে আছে একমাসের বেশি সময় ধরে। দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি রুটে ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হতো। এবার সেই সদরঘাট থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়ে দূরপাল্লার লঞ্চগুলো।
পারাবত লঞ্চ মালিক হাবিবুর রহমান জানান, লকডাউন না উঠলে লঞ্চ চলবে না। আর মালিকরা লঞ্চগুলো প্রয়োজনে করোনা আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যববহারে সরকারকে দেবেন। আর এসব কারণে ঈদ যাত্রার ব্যবসা এবার হচ্ছে না লঞ্চ মালিকদের।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ পর্যন্ত কোনো নৌ-রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে না। সীমিত আকারে মালবাহী জাহাজ চলাচল করছে। আর এজন্য এবার নৌ-পথে কোন ঈদযাত্রাও নেই।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, তাদের যত ক্ষতিই হোক সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে তারা এই ঈদে লঞ্চ ছাড়বেন না।