করোনা সংক্রান্ত সরকারি তথ্য-উপাত্ত সঠিক নয়: ফখরুল
৭ মে ২০২০ ১৬:২৯
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত সরকারি তথ্য-উপাত্ত সঠিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিই) প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, অসুস্থ, সুস্থ এবং মৃত্যু সম্পর্কে যে ডাটাগুলো দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে না। সংক্রামণ যখন বাড়ছে, তখন মৃত্যু ২/৩/৪ এ এসে পৌঁছাছে। অথচ সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বলেছেন, আমার এখানে ৩১ জন মারা গেছেন, কয়েকজনের ডায়গোনেসিস হয়েছে করোনা পজেটিভ, বাকিদের আমরা এখন পর্যন্ত টেস্ট করিনি।’
‘এটাকে কী সরকার বলবেন আপনারা? যাদের এতোটুকু দায়িত্ববোধ নেই্, যারা চরম দুর্দিনেও জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণকে প্রতারণা করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?’— প্রশ্ন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
তিনি বলেন, ‘আজ প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের! আর এরা খুলে দিয়েছে শপিং মল। কেনো? ঈদের বাজার করতে হবে আর অর্থনীতিকে চালু রাখতে হবে। এতোদিন কী করলেন? এই যে মধ্য আয়ের দেশে চলে গেলেন, অর্থনীতি আপনার রোল মডেল বিশ্বের মধ্যে। বর্তমান অবস্থাকে ধারণ করার মতো শক্তি এই ইকোনমির তৈরি হয়নি কেন? কারণ, আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলেছেন, মানুষকে প্রতারণা করেছেন, ভুল বুঝিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। যখন স্বাভাবিক অবস্থা ছিলো তখন ব্যর্থ হয়েছেন, আজ যখন যুদ্ধাবস্থা চলছে, চরম দুযোর্গ-মহামারি চলছে, সেই সময়ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি তখন আপনি সেটাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে, কোনো দরকার নেই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টিপটপ জেন্টেলম্যান। তিনি সুযোগ পেলেই সুন্দর সুললিত ভাষায় বিএনপিকে আক্রমণ করেন। আমি একটা কথা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে আপনি যে কথাগুলো বলেন, সেটা পরে আবার শোনেন কী বলছেন? শোনা উচিত এজন্য যে, শুনলে নিজেই বুঝবেন যে, জনগণ আপনার কথা বিশ্বাস করছে না এবং কথাগুলো সঠিক নয়।’
তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই যে গার্মেন্টস উনারা (সরকার) খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকা থেকে সব চলে আসলো যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিলো আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত এলো।’
তিনি বলেন, ‘এই যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা (সরকার) গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন, এটা আসলে ক্ষমাহীন অপরাধ। আমি তো মনে করি, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এই ধরনের ভুল, এটা ভুল নয়, এগুলো হচ্ছে ক্রিমিনাল অফেন্স। এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জীবনের অধিকার তাদের ফান্ডামেন্টাল রাইট টু লিভ। সেই জায়গায় তারা আঘাত করছেন অর্থাৎ ইউ হেভ নট রাইট টু লিভ টু ডায়িং। কিচ্ছু যায় আসে না। অবস্থাটা আজকে সেরকম হয়ে গেছে।’
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশ করছেন। কিন্তু তাদের অবস্থাটা কী? বিভিন্ন জায়গায় ছাটাই হচ্ছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই।’
‘আমি আহ্বান জানাবো, সংবাদ মাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদ কর্মীদের বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকুরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিস্কার আহবান, অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান, আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ।
করোনাভাইরাস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সরকার সরকারি তথ্য-উপাত্ত