‘করোনা দুর্যোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে’
৯ মে ২০২০ ১৫:২৪
ঢাকা: করোনা দুর্যোগের মধ্যে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে জনরোষের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। এই মুহূর্তেই রাষ্ট্রের এই অন্যায় বন্ধ করতে হবে।’
শনিবার (৯ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারিরে মধ্যে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ করে গ্রেফতার ও হয়রানি চলছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সকল কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা এবং সংক্রিমতদের যথাযথ চিকিৎসার দাবি জানান বিএনপি মহাসিচব।
তিনি বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া ‘প্রিজনার্স অব কনসায়েনস’সহ সকল রাজবন্দি, আদালত পুরোপুরি না খোলা পর্যন্ত হত্যা-ধর্ষণসহ জঘন্য অপরাধ ছাড়া সব ধরনের গ্রেফতার বন্ধ রাখা অথবা বিকল্প হিসেবে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালত খোলার পর আত্মসমর্পণের শর্তে মুক্তি, কারাবন্দি লঘু অপরাধে ও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মী, বয়স্ক ও মহিলা বন্দিদের মুক্তি দিন।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন করে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষজন গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে একটি কার্য্কর মানহানি আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতন ও হয়রানি উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই বার বার ব্যবহার করছে সরকার। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে পেছনে হাতমোড়া অবস্থায় হ্যান্ডকাফ পরা সাংবাদিকের (শফিকুল ইসলাম কাজল) ওই ছবিসহ সংবাদ প্রমাণ করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকার কীভাবে সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার দূরে থাকুক, মানুষ তার কষ্টের কথাও যেন ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করতে না পারে, তার জন্য একের পর এক পরিপত্র জারি করে চলেছে সরকার। বিটিআরসির মতো একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছে ডিজিটাল জগতে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠার প্রধান পুলিশি প্রতিষ্ঠানে। শুধু বিএনপি নয়, সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদপত্র সম্পাদকদের সম্মিলিত সংগঠনও ওই গণবিরোধী আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বার বার। এরই মধ্যে সাত জন রাষ্ট্রদূত টুইটারের মাধ্যমে এই গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে বলেছেন সরকারকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন ‘দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হরদম গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ ত্রাণের চাল চোর ও গম চোররা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং ফ্যাসিবাদী চরিত্রে মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের জারি করা পরিপত্রগুলো কী রকম ডিকটেটোরিয়াল, চিন্তা করা যায় না। এখন চাল চুরি হচ্ছে, গম চুরি হচ্ছে, সোয়াবিন তেল চুরি হচ্ছে, রিলিফ চুরি হচ্ছে— এসব নিয়ে যদি লিখতে যান, সেটা অন্যায় হবে? সত্য উৎঘাটন করাই তো সাংবাদিকদের কাজ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ধরনের পরিপত্র জারি করে কেবল দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এখন যে প্রশ্নটা এসে যায়, সরকার এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিরব কেন? আর যারা এসব তুলে ধরছে, কথা বলছে, তাদের ওপর সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে কেন? এ ক্ষেত্রে সরকারের নিশ্চয়ই কোনো দুর্বলতা আছে। যে কারণে তারা প্রশ্রয় দিচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্য খবর লুকানোর কারণ কী, হাইড করার কারণটা কী? কেন এ ধরনের দমন-নির্যাতন চলছে? এসবের অর্থ, সত্য কথা যেন বেরিয়ে না আসে। এটা কার স্বার্থে যাচ্ছে? সরকারের স্বার্থে কিন্তু যাচ্ছে না আলটিমেটলি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ত্রাণে দুর্নীতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর