করোনায় কর্মহীন দিনমজুরদের জন্য ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ
৯ মে ২০২০ ১৫:৫২
ঢাকা: মানিকনগর এলাকায় নিয়মিত রিক্সা চালান বশির আহমেদ (৪৫)। স্বাভাবিক সময়ে রিক্সার ভাড়া চুকিয়েও প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় করতেন। কিন্তু গত এক মাসে সব তিন হাজার টাকাও আয় করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে রাস্তায় মানুষ কম বের হয়, তাছাড়া অফিস আদালত, মার্কেট বন্ধ রয়েছে। একদিকে রোজা, অন্যদিকে যাত্রী নেই। ইনকাম কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’
এর মধ্যেই তাকে প্রতিদিন যাত্রী বহন বাদ দিয়ে কোথায় ত্রাণ দিচ্ছে সেখানে দৌঁড়াতে হয়। বেসরকারিভাবে দুবার পেলেও সরকারি সহায়তা পাওয়ার উপায় নেই।
লকডাউনের শুরু থেকেই গোপীবাগ এলাকার প্রপার্টি ডিলাইটের ম্যানেজমেন্ট কমিটি বাড়িতে গৃহকর্মীসহ সবধরনের অতিথি বা বাইরের মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় ওই ভবনের অনেক পরিবার গৃহকর্মীদের বেতন চুকিয়ে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। ওই ভবনে কাজ করেন মাকসুদা বেগম (৩৪)।
তিনি জানান, ওই ভবনের দুইটি পরিবারে সকাল-বিকাল পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন মাকসুদা। করোনার বিস্তার ঠেকাতে মালিক ফোন করে বলে দিয়েছেন আর যেতে হবে না। এই অবস্থায় চার হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে দিন কাটানো কঠিন হয়ে পড়েছে তার। কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আর স্বাভাবিক হলেও তিনি নতুন কাজ পাবেন কিনা তাও নিশ্চিত নন। পরিবহন বন্ধ থাকায় গ্রামে ফিরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
কাজ নেই, তাই আয়ও নেই। আয় নেই, তাই ঠিকমতো খাবারও জোটে না। সাধারণ ছুটি যত দীর্ঘ হচ্ছে ততই অভাব ও শঙ্কা বাড়ছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের। যাদের নাম শ্রমিক হিসেবে সরকারের খাতায়ও নেই। তাই তাদের কাছে সরকারের সহায়তাও পৌঁছে না। তাই এবার সরকার এইসব শ্রেণিহীন শ্রমিকদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য চলছে তালিকা তৈরির কাজ। তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলেই সরকার এসব কর্মহীন হয়ে পড়াদের মাঝে ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওইসব দিনমজুর শ্রমিকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শ্রম অধিদফতর শ্রমিকদের তালিকা তৈরির জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে। সে তালিকায় থাকবে দিনমজুর, রিক্সা ও ভ্যান চালক, মটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষ, যারা দীর্ঘ ছুটিতে কাজ হারিয়েছেন।’
শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধের সহায়তা নিয়ে জেলা প্রশাসকরা এই তালিকা তৈরি করবেন। সেখানে যাতে কোনো ধরনের বৈষম্য না হয় সেদিকেও যাচাই-বাছাই করবেন জেলা প্রশাসক। শ্রম অধিদফতরের মাধ্যমে ওইসব শ্রমিকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে তাতে এককালীন নগদ অর্থ পাঠানো হবে। আর এই জন্য ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে জানান তিনি।
দেশে কত সংখ্যক শ্রমিক দৈনিক মজুরিতে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন তার কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে- কয়েক লাখ শ্রমিক রয়েছেন যারা রিক্সা, ভ্যান, নির্মাণ কাজ, ইটভাটা, হোটেল, রেঁস্তোরা, পার্লার, লোহা লক্করের কাজ, মেকানিক একং দোকান ও বাসা বাড়িতে কাজ করছেন। এদের বেশির ভাগই দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন থাকায় এই শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের এখন তিনবেলা খাবার সংগ্রহই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি তারা হারাতে বসেছে ভাড়ায় থাকা ঘরও।
৭৬০ কোটি করোনা কর্মহীন দিনমজুর বরাদ্দ মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম প্রতিমন্ত্রী সরকার