স্বাস্থ্য, কৃষিসহ ৪ খাতে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি সিপিডি’র
৯ মে ২০২০ ১৬:১১
ঢাকা: আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট চারটি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিড)। খাত চারটি হলো— স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তথা সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান।
শনিবার (৯ মে) সকালে ‘কোভিড-১৯-বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। সিপিডি’র বাজেট সুপারিশমালা ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এ পর্যন্ত সরকার গৃহীত বিভিন্ন নীতি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সিপিডি’র মতামত তুলে ধরতে এই ব্রিফিং আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাজেটে অপ্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ কাটছাঁট করে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে করফাঁকি রোধ করে, করের জালের আওতায় বাড়াতে হবে। গত ১০ বছরে দেশ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই টাকা পাচার বন্ধ করা গেলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকত। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে হলে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের কর আদায়ের পরিমাণ জিডিপি‘র ১৮ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ কর আহরণ জিডিপি‘র মাত্র ১০ শতাংশ। অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের কর আহরণের পমিাণ জিডিপি‘র ১৫ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অন্যাথায় আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
ড. ফাহমিদা বলেন, সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আগামীতে লাখ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে আসবেন। এই বিষয়টি মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে। কারণ করোনা-পরবর্তী বিশ্বের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে কোনো কোনো দেশের তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে।
সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান— এই চারটি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মাত্র জিডিপি‘র দশমিক ৭০ শতাংশ। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায়ও কম। অবার এই বরাদ্দও সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। তাই স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এই বরাদ্দের পরিমাণ কমপক্ষে ১ দশমিক ২ শতাংশ করা উচিত। দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের ৭০ শতাংশ নিজ পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে। কৃষিতেও একই কথা প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে ব্যক্তি আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করতে হবে। কারণ গত কয়েকবছর ধরে আমাদের কর আয়সীমা বাড়ছে না।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বর্তমানে দেশে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। ফলে এই ক্ষেত্রে আগামী দুই থেকে তিন মাস কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে রিজার্ভ কিছুটা চাপের মুখে পড়বে। ফলে এই মুহূর্তে বিভিন্ন বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যতটা পারি সাহায্য নিয়ে আসতে হবে।
সিপিডি‘র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় খাত থেকে ব্যয় কমিয়ে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় এই খাত থেকে কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে। আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এই খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণও কমে যাবে। ফলে এই খাত থেকে কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়াও সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে। এসব খাত থেকে সাশ্রয় হওয়া ব্যয় অন্যান্য খাতে প্রযোজনীয় খাতে ব্যয় করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি আগে থেকেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকের অধিকাংশ সূচক নেতিবাচক। এই অবস্থায় ব্যাংক গুরুদায়িত্ব পালন করছে। তাই আমাদের সবাই সেদিকে নজর দিতে হবে।
ফাইল ছবি
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট কর্মসংস্থান কৃষি খাত চার খাতে গুরুত্ব বাজেট সামাজিক নিরাপত্তা সিপিডি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ স্বাস্থ্য খাত