Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্যবিধি শুনে হতাশ ব্যবসায়ীরা, খুলছে না চট্টগ্রামের মার্কেট


৯ মে ২০২০ ১৮:১৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা না মানলে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা শুনে পিছিয়ে গেছেন চট্টগ্রামের প্রায় সব বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তারা দোকান খুলবেন না। তবে নগরীর কাজির দেউড়িতে ভিআইপি টাওয়ার শপিংমল স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার ঘোষণা দিয়েছে।

শনিবার (৯ মে) সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন কার্যালয়ে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের দোকান মালিক সমিতির নেতারা। বৈঠকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, উইম্যান চেম্বারের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেছি। এসব নির্দেশনা না মানলে দোকান-মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছি। তখন ব্যবসায়ীরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়েছেন, ঈদের আগে ঝুঁকি নিয়ে তাদের পক্ষে দোকান খোলা সম্ভব নয়। তবে ফুটপাতে কেউ যাতে দোকান খুলতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করার কথা উনারা বলেছেন। আমরা বিষয়টি দেখব।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি সালেহ আহমেদ সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো শতভাগ প্রতিপালন করে দোকান খোলা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা মিটিং থেকেই চট্টগ্রামের প্রায় সকল মার্কেট-শপিংমলের ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সবাই বলেছেন তারা নির্দেশনা মেনে দোকান খুলতে পারবেন না। শুধুমাত্র ভিআইপি টাওয়ার শপিংমলের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা খুলবেন। স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে তারা যদি দোকান খুলতে পারেন অবশ্যই খুলবেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

বিজ্ঞাপন

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগির সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপরিবহন যেখানে বন্ধ সেখানে আমরা কাস্টমার কিভাবে পাব? আর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান খুলে কোনো লাভ হবে না। কারণ রমজানে কাস্টমারই আসে ইফতারের পর। ব্যবসা হয় চাঁদরাতে। অথচ রাতে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। এর মধ্যে আবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সব মিলিয়ে আমরা দোকান খুলতে পারব না বলে জানিয়েছি।’

সিএমপির নির্দেশনার মধ্যে আছে, সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে দোকান-পাট ও শপিংমল খোলা এবং বন্ধ করা, মার্কেট-শপিংমলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসরতরা শুধু আসতে পারবেন মার্কেট-শপিংমলে, বসবাসের এলাকা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি না করা, প্রত্যেক ক্রেতাকে ব্যক্তিগত আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির বিলের মূল কপি সঙ্গে রাখতে হবে এবং মার্কেট-শপিংমলে ঢোকার সময় সেগুলো সঙ্গে আছে কি না নিশ্চিত হয়ে ঢুকতে দিতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের মার্কেট-শপিংমলে ঢুকতে না দেওয়া, শপিংমলের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা আলাদা নির্ধারণ করা এবং শপিংমলে আসা যানবাহনগুলোকে জীবাণুমুক্ত করা।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধিও প্রত্যেক দোকানি এবং ক্রেতাকে অবশ্যই পালন করতে হবে বলে সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৩৬০টি মার্কেট ও শপিংমল আছে। আবার বড় মার্কেটের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট মার্কেট হিসেব করলে এ সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি। নগরীর টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট এবং তামাকমুণ্ডি লেইনের প্রতিটিতে প্রতিবছর ঈদের পোশাক কেনাকাটা নিয়ে লাখো মানুষের সমাগম হয়। সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে টেরিবাজারের পক্ষ থেকে জাকাতের কাপড় বিক্রির জন্য তারা মার্কেট খোলা রাখবেন বলে প্রথমে জানান। বাকি তিনটি মার্কেটের পক্ষ থেকেও খোলা রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়। তবে পরে সম্মিলিতভাবে তারা দোকান না খোলার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানান।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু পাইকারি ব্যবসাও করি, সেজন্য প্রথমে একটু ভিন্নমত দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৬১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জন রোগী পাওয়া গেছে। কোনো মায়ের সন্তানকে মার্কেটে এনে মায়ের বুক খালি করতে আমরা চাই না। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, টেরিবাজার পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।’

নগরীর জহুর হকার্স মার্কেটে প্রায় এক হাজার দোকান আছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। গরমের দিনে তো এইসময় কাস্টমার পাওয়া যাবে না। আর করোনার ঝুঁকিও তো আছে। আগে তো নিজে বাঁচতে হবে, তারপর ব্যবসা। টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকমুণ্ডি লেইন এবং জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি আমরা যৌথভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা মার্কেট খুলব না।’

গত ৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক নির্দেশনায় ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশের শপিংমল খোলা রাখা যাবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে নির্দেশনা পাঠায়। এরপর শুক্রবার (৮ মে) চট্টগ্রামের আটটি বিপণী বিতান না খোলার ঘোষণা দেয়।

করোনা টপ নিউজ মল মার্কেট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর