ভার্চুয়াল কোর্টে আবেদন শুরু
১১ মে ২০২০ ১৬:৩৭
ঢাকা: অবশেষে নতুন এক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে দেশের বিচার ব্যবস্থা। শুরু হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্টের যাত্রা। আর সে উপলক্ষ সামনে রেখেই শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্টে আবেদন দাখিল। অনলাইনের মাধ্যমে আইনজীবীরা তাদের মক্কেলের জামিন চেয়ে আবেদন করছেন।
সোমবার (১১ মে) বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুই কোর্টে চারটি আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের কোর্টে তিনটি জামিন আবেদন দাখিল হয়েছে এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কোর্টে একটি রিট আবেদন জমা পড়েছে।
আরও পড়ুন- প্রস্তুত ভার্চুয়াল কোর্ট, উচ্ছ্বসিত আইনজীবীরা
প্রথম দিনে অনলাইনের আবেদনের বিষয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের কোর্টের বেঞ্চ কর্মকর্তা খায়রুল আলম লিটন সারাবাংলাকে বলেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিনটি জামিনের আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে একটি করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, একটি আইনজীবী দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন, আরেকটি করেছেন মো. শাহীন মিয়া নামের একজন আইনজীবী।
খায়রুল আলম লিটন জানান, এ আবেদনগুলো জজ সাহেব দেখবেন। তিনি দেখে জরুরি বিষয় হলে শুনানির জন্য দিনক্ষণ ঠিক দেবেন। তখন আইনজীবীকে তা মেইল এ জানিয়ে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কোর্টের বেঞ্চ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন প্রধান জানান, আজ একটি রিট আবেদন জমা হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ১২টায় আমরা মেইল চেক আউট করব। পরে তা বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
জামিন আবেদনকারী আইনজীবী দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট সময়ের দাবি ছিল। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক আগেই চালু হয়েছে। দেরিতে হলেও একটা বিশেষ পরিস্থিতে আমাদেরও এই আদালত চালু হলো। এটা ভালো উদ্যোগ।
তিনি বলেন, প্রতিটি জামিনই জরুরি। কিন্তু একবছর ধরে আমার মক্কেল কারাগারে। তার জামিন দরকার। গত মার্চ মাসে এ জামিন আবেদন করেছিলাম। তখন ওই কোর্টে শুনানি পর্যন্ত যেতেই ছুটি ঘোষণা হয়। এখন ভার্চুয়াল কোর্টে আবেদন করলাম।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম প্রথমবারের মতো শুরু হলো। এ দেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভার্চুয়াল আদালতে প্রথম আবেদনকারী হিসাবে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ সাহেবের জামিন আবেদন দায়ের করলাম।
তিনি বলেন, এই আবেদন দায়ের করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর মাধ্যমে অতি জরুরি বিষয়গুলো মাননীয় আদালতের নজরে আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন এই সুযোগ থেকে জনগণ বঞ্চিত ছিল।
আরেক আবেদনকারী আইনজীবী শাহীন মিয়া বলেন, আমি ইমেইলে আমার মামলার একটি সামারি পাঠিয়েছি। তা দেখে জজ সাহেব যদি জরুরি বলে মনে করেন, তাহলে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করব।
এদিকে, হালদা নদীতে অমানবিকভাবে ডলফিন হত্যা বন্ধ চেয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বেঞ্চে রিট দায়ের করেছেন আইনজীবী কাইয়ুম।
এসব আবেদনের শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ যখন সময় নির্ধারণ করবেন তখন ভিডিও কনফারেন্সে শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। এই ভিডিও কনফারেন্সে আদালত, আবেদনকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্ত থাকবেন।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল দেশের আদালত। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকায় মানুষ বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন বলে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত চালুর দাবি ওঠে। অবশেষে গত ২৬ এপ্রিল ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি।
একটি প্রক্রিয়ার পর গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই দিন পর গত ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এরপর গতকাল ১০ মে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচরপতির সভাপতিত্বে উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এতে অংশ নেন। ফুলকোর্ট সভায় ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’-এর আওতায় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুমোদিত হয়।
পরে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে কেবল জামিন শুনানি হবে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে চেম্বার আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে তিনটি বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
টপ নিউজ ভার্চুয়াল কোর্ট ভার্চুয়াল কোর্টে আবেদন শুরু ভিডিও কনফারেন্স