Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক দলের জন্য প্রণোদনা চেয়ে ফের আলোচনায় নাসিম


১২ মে ২০২০ ০০:৫৬

ঢাকা: ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি। বিএনপির চেয়ারপারসন, ২০ দলীয় জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া তখন স্বেচ্ছাবন্দি। ‘অনির্দিষ্টকালের অবরোধ’ ঘোষণা দিয়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের সপ্তম দিন চলছে তার! এরই মধ্যে খবর আসে ‘গড়ব বাংলাদেশ’— এর কামরুল হাসান নাসিম বিএনপি পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন!

শুরুটা আসলে এখান থেকে নয়! কামরুল হাসান নাসিমের ভাষ্যমতে, তিনি বিএনপিরই একজন ছিলেন! কিন্তু ২০০৬ সাল হতে তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে মেনে নিতে পারছিলেন না। তখন দল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

বিজ্ঞাপন

এক সময় ঘর ছেড়ে দেন তিনি (২০০৯ এর জুনের দিকে)। সঙ্গী একটা ছোটখাটো গাড়ি, একজন ব্যক্তিগত সহকারী আর ড্রাইভার। সারাদেশ ঘুরে মানুষ জাগানোর মিশন! গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজার থেকে শুরু করে শহরের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত। এভাবে চারশটির মতো উপজেলায় যাওয়া হয় তার। গাড়িতে থাকত হ্যান্ড মাইক। হকারের মতো করে কথা বলতেন। মাথায় লম্বা চুল, দেহসৌষ্ঠবও চোখে পড়ার মতো, দরাজ কণ্ঠ— কিছুটা ক্ষ্যাপাটে যেন! ফলে কৌতূহলী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে একশ থেকে হাজার লোকের সমাগম।

কোনো জায়গায় সন্ধ্যা বা রাত করে বক্তব্য রাখার পর ওই এলাকাতেই রাত যাপন করতেন। অচেনা মানুষের বাড়িতে সাহস করে থেকে যেতেন। এভাবেই একদিন বলে ওঠেন, ‘গড়ব বাংলাদেশ।’

রাজধানী ঢাকায় কামরুল হাসান নাসিমের ‘বিপ্লবী কর্মী’রা পোস্টার লাগাতে শুরু করে। নাসিমের ভাষ্যমতে, তখন সারা ঢাকায় তার সক্রিয় কর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজার, যে কর্মীরা তার সঙ্গে গাবতলী থেকে হেঁটে সদরঘাট পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।

২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কামরুল হাসান নাসিমকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় মামলা। অবশ্য ফিরে আসেন মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে। তবে ঘরে ফেরেননি! নিজ অফিসে টানা ২২ মাস এক চেয়ারে বসে কাটে তার। একদিন যখন নিচে নামলেন, সিকিউরিটি অবাক! বললেন, কাল-পরশু দেশের বাইরে যাব! গেলেন! অতঃপর ফিরে এসে ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি বললেন, ‘বিএনপি পুনর্গঠন করতে হবে!’

বিজ্ঞাপন

সেদিন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটা ‘ক্যারেক্টার’ হয়ে দাঁড়ান নাসিম। মাঝে-মধ্যে সংবাদ সম্মেলন, কখনো কখনো ঘোষণা দিয়ে লোকজন নিয়ে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টা এবং যথারীতি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা!

এরপর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে। সিনেমা তৈরি, ডকুফিল্ম বানানো, ছবি আঁকা, উপন্যাস লেখা, কবিতা লেখা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি।

সোমবার (১১ মে) নিজের ফেসবুক পেজে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রণোদনা চেয়ে আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কামরুল হাসান নাসিম। করোনা সংকটের মধ্যে সবাই যখন নিজ নিজ সেক্টর ও কমিউনিটির জন্য প্রণোদনা চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে, ঠিক তখন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রণোদনা চেয়ে বসলেন বিএনপি পুনর্গঠনের ‘উদ্যোক্তা’ কামরুল হাসান নাসিম। এবং সেই প্রণোদনা শুধু ‘নিজ দল’ বিএনপির জন্য নয়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ছোট বড় সব রাজনৈতিক দলের জন্যই চেয়েছেন তিনি। তার চাওয়ার ভঙ্গিতেও রয়েছে অভিনবত্ব!

নাটকীয় ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আপনারা ভালো আছেন? আপনাদের কি এই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই মুহূর্তে কোনো উদ্যোগ আছে? রাগ করবেন না, বিব্রতও হবেন না। আমার কিছু কথা ছিল। না, মহাকাব্যের মতো করে শক্ত ভাষায় সনেট লিখে বলব না— এটা করুন, সেটা করুন। তবে জানেন তো, কর্মসূচি পালন করতে, বুদ্ধিবৃত্তিক সভা-সেমিনার করতে সারাবছর রাজনৈতিক দলগুলোর খরচ করতে হয়। সেই খরচ কি জি কে শামীমেরা দেবে? ডনেরা দেবে? বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা দেবে? কোনটা?’

‘কাগজে-কলমে বলবেন, দলীয় কর্মীদের চাঁদায় চলবে দল। তা চলেও, তবে সবার চাঁদা নিয়ে নয়— যারা স্বার্থের সন্ধান করে, সেই তারাই দলকে ডোনেট করে। আর ঘুরেফিরে মাঝারি ও ছোট দলগুলো চলে শীর্ষ নেতৃত্বের পয়সা দিয়ে। হ্যাঁ, অবৈধ পন্থায় উপার্জিত পয়সায়ও চলে কয়েকটি রাজনৈতিক দল’— বলেন কামরুল হাসান নাসিম।

তিনি বলেন, “যাই হোক, প্রিয় নির্বাচন কমিশন, তোমরা তোমাদের ইচ্ছামতো দলের নিবন্ধন দিবা, মাতব্বরি করবা! ওই পাঁচ বছর পর পর বিটিভিতে ফালতু নাটিকা বানিয়ে বলবা, ‘যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন’— এসবেই হয়ে যাবে? তোমাদের কাজটা কী? বড় বড় নির্বাচন শেষ করতে পারলেই তো বড়, বড় ‘কমিশন’! তোমাদের অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। দেশে কি বাস করি না? জানি না কিছু? সরকারের টাকা লুটে খাচ্ছ। প্রকারন্তরে জনশ্রেণির টাকা।’

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে পৌঁছায় দাও সেই অর্থ। নিবন্ধন দেওয়ার সময় তো দলের সাইনবোর্ড খুঁজে বেড়াও, যত আইন ছোট দলগুলোর জন্য। এই তোমরা দেশের রাজনীতির বিকাশে প্রধান অন্তরায়। যাক সে কথাতেও যাব না। দলের অসহায় কর্মীদের জন্য কিংবা যারা বিপদে পড়ে আছে, তাদের জন্য নির্বাচন কমিশনকেই এখন উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে অভিভাবক হয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারি দলও সেই প্রণোদনার অর্থ পাবে। কোনো দল যদি গ্রহণ করতে না চায়, সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।’

“আমি মনে করছি, প্রতিটি দলের জন্য ক্যাটাগরি ভাগ করে এ প্লাস, এ, এ মাইনাস, বি, সি, ডি ঠিক করে অর্থ প্রদান করবার উদ্যোগে নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সাথে বসুন। এ প্লাস নিদেন পক্ষে ৬৪ কোটি টাকা, এ ৫০ কোটি টাকা, এ মাইনাস ৩২ কোটি টাকা— এভাবে ডি ক্যাটাগরি ৫ কোটি করে টাকা যেন পায়, সেই সুপারিশ করছি। এখানেই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ঐক্য। ‘মুজিববর্ষ’ বড় ধরনের মাহাত্ম্যে যাবে তখন”— বলেন কামরুল হাসান নাসিম।

তিনি বলেন, ‘ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল নয়, সেটি নিয়েও গবেষণার দিক আছে। নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করতে পারে, সকলেই সহযোগিতা করবে তাতে। সেই কমিটিতে রাজনীতিকসহ অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সাংবাদিকেরাও থাকবেন।’

কামরুল হাসান নাসিম গড়ব বাংলাদেশ বিএনপি পুনর্গঠন রাজনৈতিক দলের জন্য ত্রাণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর