সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়তে চান উত্তরের মেয়র আতিক
১৩ মে ২০২০ ০৯:২১
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নতুন মেয়াদে সবাই মিলে সবাইকে নিয়েই গড়ে তুলতে চাই সবার ঢাকা। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে আমাদের সামনে। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতেও আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। আর তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি আমার নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ সচল আধুনিক ঢাকা’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চাই।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার ৭৬ দিন পর বুধবার (১৩ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। শপথ নিলেও নির্বাচন কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এই সিটি করপোরেশনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জামাল মোস্তফা। তবে বুধবার থেকে পূর্ণ মেয়াদে নিজের দায়িত্ব শুরু করতে যাচ্ছেন আতিকুল ইসলাম।
এর আগে মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পরে ৯ মাস আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর এবার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চানা তিনি। যদিও কাগজে কলমে দায়িত্ব না পেলেও আতিকুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিদিনই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। অনেকটা মিডিয়াকে আড়াল করেই বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ নিয়ে নিজেই ছুটে গেছেন বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়াও ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচানোর জন্য ছুটেছেন খাল উদ্ধার করতে। এছাড়াও এডিস মশক নিধন কর্মসূচি থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া হাত ধোয়া কার্যক্রমেও কাজ করে গেছেন আতিকুল ইসলাম।
‘সামনের দিনগুলিতে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ কী মনে করছেন?’- এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছি আমি। ব্যক্তিগতভাবে সেই ইশতেহারে থাকা প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা অসম্ভব বলে মনে করি না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি আমার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করে যাওয়াটাই আপাততভাবে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি।’
‘একদিকে যখন কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়েও উঁকি দিচ্ছে নতুন আশঙ্কা। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ কী ভাবছেন?’- এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আলাদাভাবে চ্যালেঞ্জ বলতে গেলে আসলে সেটা অজুহাত দেওয়া হয়। আমি কাজের মানুষ আর তাই কোনো কিছু নিয়ে অজুহাত দাঁড় করাতে চাই না। আমরা যদি সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে পারি তাহলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে যেমন দেশকে রক্ষা করতে পারব, সেইসঙ্গে ডেঙ্গুও মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সামনের দিনগুলোতে জীবন ও জীবিকাকে চলমান রাখার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যেও আসলে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চাই। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মাঝেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তাই অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়া আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন করার কাজ অব্যাহত রাখতে চাই। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের আধুনিকায়ন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি জোরদার করা, উন্মুক্ত খেলার মাঠ, পার্ক তৈরি ছাড়াও আমার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী নগরবাসীর সেবাপ্রাপ্তির সহজ করা ও ডিজিটাল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যেই প্রতিটা দিন কাজ করে যেতে হবে।
‘শহরটা তো আমাদের, তাই এখানে দায়িত্বের আশায় বসে থাকা যাবে না’- উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে এরই মধ্যে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের প্রধান হিসেবে থাকছেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা। ১০ মে থেকে কিন্তু এই টিমগুলো মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও কোনো বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা বা মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
‘ডিএনসিসির ২৭টি মাতৃসদনে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি। ডেঙ্গুর লক্ষণ যেমন জ্বর আবার কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতেও জ্বরের উপসর্গ থাকছে। এই অবস্থায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে গিয়ে আলাদাভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার কী কোনো সম্ভাবনা দেখছেন?’- এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরে আমাদের ডেঙ্গু অভিজ্ঞতা কিন্তু ভালো ছিল না। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর ডিএনসিসির ২৭টি স্থানে আলাদাভাবে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বীকার করতে কোনো দোষ নেই যে, গতবারের পরিস্থিতি বুঝতে বুঝতেই কিন্তু অনেক সময় চলে গিয়েছিল। আর তাই এবার এই ২৭টি স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট দিয়ে দিতে বলেছি আগেই। এখানে বিনামূল্যে পরীক্ষা করানো থেকে শুরু করে চিকিৎসা দেওয়াও শুরু হচ্ছে।
তিনি জানান, যেসব স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেখানে কিন্তু কোভিড-১৯ পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। আর তাই এই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে যারা কাজ করবেন তাদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কিন্তু সামনের দিনগুলোতে কাজ করতে হবে। সেই সহযোগিতা পেলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আর তখন গড়ে তোলা সম্ভব একটি সুস্থ, সচল আধুনিক ঢাকা।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই মানুষের পাশে ছিলেন, কাজ করে গেছেন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোভিড-১৯ ঝুঁকি এড়াতে ২৫ মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ সময় দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের পাশে দাঁড়ানোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি দায়িত্ব মনে করি। আর তাই অসহায় কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করি। প্রায় ৬১ হাজার পরিবারের মাঝে এই খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেই। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারকে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আমার ফেসবুক পেজে বা ব্যক্তিগতভাবে যারাই সমস্যার কথা জানাচ্ছেন, তাদের বাসায় এসব খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রায় ৩০০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল আছে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১০০টি পরিবারকে টার্গেট করে রেখেছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে আগামী চার মাস পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে আমি তাদের পাশেই থাকব। এছাড়াও বিডি ক্লিনের সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশে কিছু ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বর্তমানে অনেকেই কিন্তু যার যার অবস্থান থেকে গিয়ে আসছে সমাজের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। আতিকুল বলেন, ‘আমি কাজের মানুষ। তাই কাজ করে যেতে চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। এক কথায় যদি বলি, আসলে আমি সবাইকে নিয়ে সামনের দিনগুলোতে এমন একটি ঢাকা উপহার দিতে চাই যে শহর হবে আলোকিত, গতিশীল; যেখানে থাকবে প্রাণের স্পন্দন, সমস্যা থাকবে কম।
উল্লেখ্য, নতুন মেয়াদের দায়িত্ব পালন শুরু করা উপলক্ষে বুধবার নগরভবনে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আতিকুল ইসলাম তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।