Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে ২৭ বিমা কোম্পানির তালিকাভুক্তি


১৩ মে ২০২০ ১৩:৫২

ঢাকা: পুঁজিবাজারে এখনো তালিকাভুক্তির বাইরে রয়েছে ২৭ বিমা কোম্পানি।পরিশোধিত মূলধনের অভাবসহ নানা আইনি জটিলতায় এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব কোম্পানিকে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস পরেও কোনো বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিচজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা পাবলিক ইস্যু আগে সংশোধন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএর) সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে ২৭ বিমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে হলে বিমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে অথবা আইনি ছাড় দিতে হবে। মূলধন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসণে আইডিআরএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, কোনো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে সেই কোম্পানিকে পাবলিক রুল ইস্যু পরিপালন করে আসতে হবে। অন্যথায় বিদ্যামান আইনে তালিকাভুক্তির কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানিয়েছে, ২৭ বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিচ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল  ও সময়সাপেক্ষ। সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘জীবন বীমা করপোরেশন’, ‘সাধারণ বীমা করপোরেশন’ এবং দুইটি বিদেশি বিমা কোম্পানিসহ মোট ৭৮টি বিমা কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে জীবন বিমা ৩২টি ও সাধারণ বিমা কোম্পানি ৪৬টি। বিদেশি বিমা কোম্পানি দুইটি হলো আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (মেটলাইফ) ও লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ (এলআইসি)। এই ৭৮টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ১৮টি জীবন বিমা এবং ৯টি সাধারণ বিমাসহ মোট ২৭টি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাইরে রয়েছে।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিকর ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানিকে বিএসইসির বেঁধে দেওয়া পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব রয়েছে। এসব বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করতে হবে। তা না হলে বিমা কোম্পানির উদ্যেক্তা অংশের মূলধন বাড়াতে হবে। কিন্তু দুইটি প্রক্রিয়াই বেশ জটিল হওয়ায় আপাতত এইসব কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বিমা আইন, ২০১০-এর ২১ ধারা তফসিল-১ অনুযায়ী বাংলাদেশের নিবন্ধিত লাইফ ইনস্যুরেন্সের ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। এই ৩০ কোটি টাকার ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের এবং বাকি ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ কোটি টাকা জনসাধারণ থেকে নেওয়া হয়। অন্যদিকে নন-লাইফ ইনস্যুরেন্সের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা থাকতে হবে। এই ৪০ কোটি টাকার ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ কোটি টাকা উদ্যেক্তাদের এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ বা ১৬ কোটি টাকা জনসাধারণ থেকে সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের জারি করা পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ (সংশোধিত)-এর বিধান অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও‘র মাধ্যমে জনসাধারণের নিকট থেকে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করতে হবে। সে অনুযায়ী বিমা কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৭৫ কোটি টাকা। এই ৭৫ কোটি টাকার মূলধনের মধ্যে ২০১০-এর তফসিল-১ অনুযায়ী ৬০ শতাংশ হিসাবে উদ্যোক্তাদের অংশ ৪৫ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০ শতাংশ বা ৩০ কোটি টাকা জনগণের অংশ হিসাবে অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু উল্লেখিত ২৭ কোম্পানির সবগুলোর বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকার কম। ফলে কোম্পানিগুলো বিদ্যমান আইনে পুঁজিবাজারে আসার কোনো সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইন পরিপালন করে পুঁজিবাজারে আসতে হলে বিমা কোম্পানির উদ্যেক্তাদের তাদের অংশের অতিরিক্ত অর্থ জোগান দিতে হবে। এই অতিরিক্ত অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিমা কোম্পানির সক্ষমতা নেই। ফলে বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি সম্ভব হচ্ছে না।

তালিকাভুক্তির বাইরে ২৭ বিমা কোম্পানি

বর্তমানে ২৭টি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জীবন বিমা ও ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি। জীবন বিমা কোম্পানিগুলো হলো— বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ও এলআইসি বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি হলো— এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স, দেশ জেনরেল ইনস্যুরেন্স, মেঘনা ইনস্যুরেন্স, সাউদ এশিয়া ইনস্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স ও সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

এর আগে, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২৭টি বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস সময় বেঁধে দেন। কিন্তু এরই মধ্যে সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও আইনি জটিলতার কারণে কোন বিমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অভাব পুঁজিবাজার বিমা কোম্পানি মূলধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর