বাস না চললেও থেমে নেই ‘ঈদযাত্রা’
১৪ মে ২০২০ ২০:৫৭
ঢাকা: ভোররাতে ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাট যেতে লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। এরপর সাড়ে চার ঘণ্টা শত শত গাড়ির সারিতে আটকে থাকা। তবে এই সারিতে নেই কোনো গণপরিবহন অর্থাৎ বাস। কারণ এটাতো অন্য কোনো সময় না; এখন করোনাকাল। দেশে চলছে লকডাউন। করোনার বিস্তার রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে দেশটাকে লকডাউনে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষ অন্যান্য বছরের মতোই ‘ঈদযাত্রা’র আমেজ নিয়ে ছুটছে বাড়ির দিকে। তবে এবার বাহন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এর বাইরে রয়েছে, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল অথবা পণ্যবাহী যান।
করোনা বিস্তার রোধ ও পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সাধারণ ছুটি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। এছাড়া দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ৩০মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। কিন্তু রাস্তার চিত্র ভিন্ন। ঢাকায় পণ্য নামিয়ে মানুষ নিয়ে ফিরছে যানগুলো। ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে মানুষের যাতায়াত। নিষেধাজ্ঞা না মেনে অনেকেই বেরিয়ে পড়ছেন বাড়ির পথে।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/251235419453205
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সেহরির পর ঢাকা থেকে বেরিয়ে মাওয়া ঘাটে এসে পৌঁছেছেন প্রাইভেটকার চালক সালাম। তিনি জানালেন, পথে কোথাও কোনো পুলিশি বাধায় পড়েননি। এদিকে আবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদা নিয়ে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।
মাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর সাখাওয়াত কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্রাইভেটকারে প্রচুর যাত্রী এসে মাওয়া ঘাটে ভিড় করছেন। ছয় থেকে সাতটি ফেরি মাওয়া-কাঠালবাড়ি রুটে চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে প্রাইভেট যানবাহনের ভিড় লাগলেই তারা ছুটে যাচ্ছে।’
পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন নূরনবী। ‘করোনার মধ্যে কেন ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন?’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে কেউ তো মানা করছে না। পথে কোথাও আমাদের পুলিশ থামায়নি। শুধু মাওয়া ঘাটে এসে চার ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছি। গাড়ি ফেরিতে উঠতে পারছে না ‘
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসের কোনো চলাচল নেই। তবে প্রাইভেটকারে মানুষ চলাচল করছে। ঢাকার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং আসছে। কিন্তু কারা আসলে প্রাইভেটকারে বাড়ি যাচ্ছেন সেটাতো বোঝা যাচ্ছে না। এটা ফেরিঘাট ও টোল প্লাজায় চেকপোস্টের মাধ্যমে বোঝা যাবে। কারণ ঢাকা থেকে সাভার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রাইভেটকারে মানুষ চলাচল করছে।’
এদিকে মহাসড়কে পুলিশ চাঁদা নিয়ে গাড়ি ছাড়ছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। গত সোমবার সাড়ে ১২টায় এমন পরিস্থিতির শিকার একজন চালক সারাবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঢাকার হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট কারে রোগী পৌঁছে দিয়ে মৌলভীবাজার থেকে ফিরছিলেন তিনি। নরসিংদী রায়পুরায় চেকপোস্টে তার প্রাইভেট কার থামানো হয়। চালক রোগী পৌঁছে দিয়েছেন বলার পরও চেকপোস্টে পুলিশ থামিয়ে রাখে। এ সময় তাদের গাড়ি ছেড়ে দিতে বললে সেখান থেকে জানানো হয়, ছাড়তে হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াতের অনুমোদন লাগবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বক্তব্য জানতে তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ও এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আধঘণ্টা পর চেকপোস্টের পুলিশ পাঁচশ টাকা নিয়ে সেই প্রাইভেট কারটি ছেড়ে দেয়। এই সময়ে এরকম আরও কয়েকটি ঘটনা দেখেছেন ওই চালক।
ঢাকা সিলেট মহাসড়ক প্রায়ই এমন চাঁদাবাজি চলে। মিনি ট্রাকে পণ্য আনা-নেওয়া করা চালক বাবুল মিয়া সারাবাংলার এ প্রতিবেদককে জানান, নরসিংদী পাড়ি দিতে হলে চাঁদা লাগবেই। তিনি চাঁদা ছাড়া নরসিংদী পার হতে পারেন না। চাঁদা দিতে দিতে এমন অভ্যস্ত হয়েছেন তিনি যে, এখন চলন্ত অবস্থায় চাঁদার টাকা ছুঁড়ে দিয়ে চলে আসেন। তার ভাষ্যে- এটা রীতিতে পরিণত হয়েছে।