Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ত্রাণ নিয়ে অভাবগ্রস্ত ত্রিপুরাদের পাশে ৪ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান


১৫ মে ২০২০ ১৯:১৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পাহাড়ি এলাকার ত্রিপুরা পল্লী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই পল্লীর ঘরে ঘরে এখন অভাব। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দিনমজুর হারিয়েছে তার কাজ, স্বল্প আয়ের চাকুরিজীবীও বেকার হয়ে বসে আছেন ঘরে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রামের চার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

গত একমাস ধরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষুক-ভাসমান মানুষদের খাবার বিতরণ করে আসা এই চার তরুণ শুক্রবার (১৫ মে) ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন ত্রিপুরা পল্লীতে।

সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন সংগঠন ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়ন- ইকো’র উদ্যোগে হাটহাজারী উপজেলার উদালিয়া গ্রামের মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় ৫৭ পরিবার, সোনাই ত্রিপুরা পাড়ায় ৩ পরিবাকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ওই এলাকায় ১০ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকেও দেওয়া হয়েছে ত্রাণসামগ্রী।

এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে নিয়ে সচী কুমার ত্রিপুরার ৮ জনের সংসার। পেশায় দিনমজুর। সচী জানালেন, গত প্রায় দুইমাস ধরে ঘরে বসা। কাজ নেই একেবারে। কষ্টে কাটছে দিন। প্রতিবেলা ভাতও খেতে পারছেন না।

৬৫ বছর বয়সী ধানবী ত্রিপুরা পাড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন। এক ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ ৬ সদস্যের সংসার। ছেলে দিনমজুর। ধানবী জানালেন, ছেলের হাতে কোনো কাজ নেই। ঘরে বসা। ভিক্ষার চালে কোনোমতে চলছে সংসার।

টানাপড়েনের সংসারে ত্রাণ পেয়ে খুশি ধানবী ও সচী ত্রিপুরা। ধানবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘একবেলা খাই, আরেকবেলা উপোস থাকি। এই ত্রাণে অন্তঃত মাসখানেক ভালোভাবে চলতে পারবো।’

৩০ বছর বয়সী ধীরন বালা ত্রিপুরা মন্দিরভিত্তিক একটি স্কুলের শিক্ষিকা। স্বামী একটি স্টিল কারখানার টেকনিশিয়ান। ত্রাণ পেয়ে ধীরন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল থেকে বেতন ঠিকমতো পাচ্ছি না। কারখানা বন্ধ। এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এখানে তো কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে না। আজ কিছু ত্রাণ পেলাম। খুব ভালো হল।’

চার তরুণের মধ্যে আছেন- ইকোর সভাপতি মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, সম্পাদকদণ্ডলীর সদস্য সাহেদ মুরাদ সাকু ও ইউসুফ সোহেল।

মোহাম্মদ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি বলেন, ‘ত্রিপুরা পল্লীতে পরিবারগুলো খুবই মানবেতন জীবনযাপন করছেন। খবর পেয়েই আমরা ত্রাণ নিয়ে এসেছি। আমরা সমাজের বিত্তবানদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।’

ত্রাণ বিতরণের সময় মুক্তিযোদ্ধা বাদশা আলম ও সাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইকবাল আহমেদ, ফরহাদাবাদ ইউপি সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইমরান, উদালিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউল আকবর মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ কালু, সফিউল আজম চৌধুরী স্বপন, মনাই ত্রিপুরা পাড়া প্রতিনিধি শচীন কুমার ত্রিপুরা ও বিবন কুমার ত্রিপুরাও ছিলেন।

২০১৮ সালের আগস্টে হাম আক্রান্ত হয়ে একের পর এক শিশু মরতে থাকলে দুর্গম পাহাড়ের এই ত্রিপুরা পল্লীটি সবার নজরে আসে। সুবিধাবঞ্চিত এই ত্রিপুরা পল্লীতে যাওয়ার জন্য একবছর আগে সড়ক তৈরি হয়েছে। পৌঁছেছে বিদ্যুৎসহ আরও নানা সুবিধা।

৪ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান করোনাভাইরাস ত্রিপুরা পল্লী হাটহাজারী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর