৫৮ দিনে আক্রান্ত ১০ হাজার, ১১ দিনেই পরের ১০ হাজার
১৬ মে ২০২০ ০৯:০০
ঢাকা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। দিন যত যাচ্ছে, সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর হারও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ২০ হাজারের সীমা। আর শুরুর দিকে সংক্রমণের গতি ধীর থাকলেও এখন চোখের পলকে সংক্রমণ পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক সংখ্যার সীমা।
তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১০ হাজার ব্যক্তি শনাক্ত করতে যেখানে ৫৮ দিন সময় লেগেছিল, সেখানে পরের ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১১ দিনেই। এর মধ্যে আবার শেষ পাঁচ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র চার দিন।
শুক্রবার (১৫ মে) দুপুরে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ২০২ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এটিই সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড। এর ফলে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
১০০ সংক্রমণ একমাসে
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই দিনসহ মার্চ মাসের ২৪ দিনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১ জন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় একশ জনে। সেটি ছিল প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ৩০তম দিন। অর্থাৎ একমাস সময় লাগে একশ জন শনাক্ত হতে।
৩৮ দিনে সংক্রমণ হাজারে
প্রথম একশ সংক্রমণ শনাক্ত হতে ৩০ দিন লাগলেও ৩৮ দিনে মথায় এক হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ পরের ৯শ সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লাগে মাত্র আট দিন। এই সময়ের মধ্যেই ৯ এপ্রিল প্রথম একদিনে একশ কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে।
৫ হাজার সংক্রমণ ৫০ দিনে
গত ২৬ এপ্রিল কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার পেরিয়ে যায়। সেদিন ছিল প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ৫০তম দিন। সেই হিসাবে ৩৮ দিনে এক হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হলেও পরের চার হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় মাত্র ১২ দিনে। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার গতি এরপর ক্রমেই বেড়েছে।
দ্বিতীয় ৫ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত ৮ দিনে
দেশে প্রথম পাঁচ হাজার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হতে ৫০ দিন সময় লাগলেও পরের পাঁচ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় মাত্র আট দিনে। অর্থাৎ ৫৮ দিনের মাথায় দেশে ১০ হাজার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে দিনটি ছিল ৪ মে। ওই দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৬৬৮ জন। সেদিন পর্যন্ত একদিনে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
১১ দিনেই শনাক্ত ১০ হাজার সংক্রমণ
প্রথম ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর করোনা সংক্রমণ যেন নতুন গতি পায়। ৫ মে থেকে আজ ১৫ মে পর্যন্ত ১১ দিনে কেবল একদিন সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ছিল সাতশ’র কম। বাকি ১০ দিনের মধ্যে সাত শতাধিক সংক্রমণ শনাক্ত হয় চার দিন, আট শতাধিক একদিন, ৯ শতাধিক একদিন। আর বাকি চার দিনই সংক্রমণ শনাক্তেরর সংখ্যা ছিল হাজারের বেশি। সবশেষ আজ এক হাজার ২০২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এদিনই।
ক্রমেই সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লাগে এক সপ্তাহ, অর্থাৎ ঠিক ঠিক সাত দিন। আর সবশেষ পাঁচ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে গত চার দিনে। অর্থাৎ শেষ ১১ দিনেই ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
ল্যাব ও নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে, বাড়ছে সংক্রমণ
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুতে স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছিল কোভিড-১৯ পরীক্ষা। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানেই (আইইডিসিআর) কেবল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এর মধ্যে ২৫ মার্চ পর্যন্ত কোনোদিনই একশ নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। এই দিনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২৪ মার্চ। সেদিন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৬ জনের মধ্যে, যা ওই সময় পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা বাড়লে সংক্রমণ শনাক্ত বাড়ার প্রবণতা দেখা যায় শুরু থেকেই।
এরপর সংক্রমণ বাড়তে থাকলে একে একে করোনা পরীক্ষার ল্যাবও বাড়তে থাকে। শুরুতে ঢাকায় আইইডিসিআরের বাইরে চালু হয় চারটি ল্যাব। এরপর বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বায়োসেফটি-২ লেভেলের ল্যাবগুলোতে শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। সবশেষ আজ ১৫ মে’র তথ্য বলছে, সারাদেশে ৪১টি ল্যাবে চলছে করোনার নমুনা পরীক্ষা। আরও কিছু ল্যাব রয়েছে পাইপলাইনে।
ল্যাব সংখ্যা বাড়তে থাকলে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। একদিনে প্রথম এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১০ এপ্রিল। পরে ১৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয় দুই হাজারের বেশি। ২২ এপ্রিল প্রথম তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়। প্রথম চার হাজার নমুনা পরীক্ষা হয় ২৮ এপ্রিল। পাঁচ হাজার নমুনা প্রথম পরীক্ষা হয় ১ মে, ছয় হাজার নমুনা ৪ মে, সাত হাজার নমুনা ১১ মে। সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো আট হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, করোনা পরীক্ষার ল্যাব আর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা যত বেড়েছে, সংক্রমণের হার ততই বেড়েছে। বিশেষ করে শেষ পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিন সাত হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এই চার দিনই সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে হাজারের বেশি। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ল্যাব ও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা যে আরও বেশি হবে, পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে।
করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ জাতীয় রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর