শিগগিরই কৃষকদের জন্য চালু হচ্ছে অ্যাপ ‘এক শপ’
১৬ মে ২০২০ ১৭:১৭
ঢাকা: কৃষকরা যাতে সহজেই তাদের পণ্য বেচাকেনা করতে পারেন সেজন্য শিগগিরই চালু হচ্ছে ‘এক শপ’ নামের একটি অ্যাপ। অ্যাপটি ডাউনলোড করে দেশের কৃষকেরা সারাদেশে পণ্য কেনা-বেচা করতে পারবেন। এর মাধ্যমে চাষীদের পণ্য এনে মেগাশপের পাশাপাশি ডোর টু ডোর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
শনিবার (১৬ মে) সকালে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য দেন।
এসময় তিনি আরও জানান, ‘আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই এই অ্যাপ উন্মুক্ত করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহনের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মাধ্যমে কোনরূপ হয়রানির মুখোমুখি না হয় সে ব্যবস্থা করা, পণ্য পরিবহনে বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার, স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব ওঠে।
এছাড়া পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণের আওতা বাড়ানো, হিমায়িত ওয়াগন ব্যবহার করা যায় কি না, ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস, অনলাইনে এবং ভ্যানে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, প্রাণ, একমি, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যারা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ম্যাঙ্গোবার, আচার, চাটনি প্রভৃতি তৈরি করে, তাদেরকে এ বছর বেশি বেশি আম-লিচু কেনার অনুরোধ জানানো এবং হাওরে ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আর এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে একই সঙ্গে মৌসুমি ফলে যেন কেমিক্যাল ব্যবহার করা না হয় সেজন্য সমন্বিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে বলা হয়েছে।
এ সময় কৃষিমন্ত্রি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও মৌসুমি ফলসহ কৃষিপণ্যের পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছে না। এ সকল কারণে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বেশির ভাগ উৎপাদিত ফল ও সবজি। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্যের বিপণন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ এই সময়ে করোনা মোকাবিলায় দৈহিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মৌসুমি পুষ্টিকর ফল গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পার। পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করা গেলে আমের বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়াবাজদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয়পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়াতে হবে। এই মধু মাসে বিদেশি ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
করোনার সময়ে সব ধরনের কার্গো লঞ্চ চালু আছে জানিয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু আম-লিচু নয়, সব মৌসুমি ফলের বাজারজাত করণে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ব্যবসায়ী ও ফঁড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয়পত্র ইস্যু, তাদের যাতায়াতে হয়রানির কমানো, ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশেষ করে আমে ফরমালিন বা ক্ষতিকর কিছু নেই মর্মে জনগণকে সচেতন ও আশ্বস্ত করতে হবে বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
স্থানীয় মার্কেটে আমের চাহিদা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ড. আতিউর রহমান। বলেন কৃষিখাতে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
উল্লেখ্য, এবার ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২২ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে অধিকাংশ আমের ফলন হয়। লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ লিচুর ফলন হয় রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায়। কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ১৮ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। অন্যদিকে, আনারসের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ৪ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। আনারসের সিংহভাগ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলে।