বাস ছাড়া সব গণপরিবহন রাস্তায়, বেড়েই চলছে করোনার ঝুঁকি
১৭ মে ২০২০ ১০:৫৫
ঢাকা: বাস ছাড়া এখন সড়কে সবই দেখা যাচ্ছে। টানছে যাত্রী। ঈদ সামনে রেখে বেড়েই চলছে মানুষের চলাচল। ঢাকার অন্যতম গেটওয়ে মাওয়া, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরচিা ঘাটে এখন ঢাকাগামী ও ঢাকা ছাড়ার ধুম দেখা যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কেউ মানছেন না। হরদম ফেরি চললেও সেখানে জীবনুনাশক কোনো স্প্রে করতে দেখা যাচ্ছে না। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। রাজধানীর ভেতরেও এখন যানজট বা ভিড়ভাট্টা লেগে গেছে।
সরেজমিন মাওয়া ও কাঠালবাড়ি ফেরিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বাস বন্ধ থাকায় বিভিন্ন উপায়ে ঘাট পর্যন্ত আসছে মানুষ। এরপর সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করেই গাদাগাদি করে চড়ছে ফেরিতে। বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও। একইভাবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে মানুষের চাপ।
বিআইডব্লিউটিএ-এর তথ্যমতে, মাওয়া কাঠালবাড়ি রুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১২ থেকে ১৪টি এখন চলাচল করছে। এক সপ্তাহ আগে মাত্র ৬টি ফেরি চালু ছিল। এখন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ফেরির জন্য কখনও কখনও দীর্ঘ জট লেগে যাচ্ছে। যে জটে ফেরিপাড়ে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। আর ফেরিতে উঠতে নামতেও প্রতিযোগিতা। এখানে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে উঠানামা দেখা যাচ্ছে। হরদম এসব ফেরি চলছেই এতে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফেরিতে বা গাড়িতে এখন আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত ক্ষুদ্র কণাগুলো পড়ে থাকলে সেখান থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
রাজধানী ঢাকাও বেড়েছে চলাচল। গণপরিবহনের মধ্যে বেশি চলছে সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল। দেখা যাচ্ছে, একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠতে গিয়ে দরজা খুলতে যে জায়গায় ধরতে হয় সেটি সবাই ধরছেন। এরকম লোহার মধ্যে অনেকের স্পর্শের ফলে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে চলা বেশকিছু মোটরসাইকেল এখন চুক্তিভিত্তিক চলছে। যেখনে দুজন পাশপাশি বসে যাচ্ছেন।
এদিকে বাস না থাকায় পণ্য পরিবহনের গাড়িতে মানুষের চলাচল দেখা গেছে। বেশিরভাগ নিম্নবিত্তের মানুষ পণপরিবহনের গাড়িতে উঠছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয় গণপরিবহন বন্ধের নোটিশে-পণ্য পরিবহনের গাড়িতে মানুষের যাতায়াত করা যাবে না বলে জানিয়েছে।
এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণ উচ্চপর্যায়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন আইইডিসিআরের পরামর্শক ও রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন।
মুশতাক হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি, লকডাউনে শৈথিল্য দেখা গেছে। বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নবিত্তের মানুষের কোয়ারেনটাইন করার মতো আলাদা ঘর নেই। এ সব কারণে রাজধানীতে সংক্রমণ বেশি।’
এ দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সারাদেশে গণপরিবহন চালু করার দাবি জানিয়েছে ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।’ তাদের ১১টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ৪০ সিটের গাড়িতে ২০ সিট পরিপূর্ণ করে এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বহন করলে ও গাড়িতে ওঠার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা এবং প্রতি ট্রিপ শেষে জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করলে করোনার সংক্রমণ থেকে যাত্রীদের রক্ষা করা সম্ভব। একইসঙ্গে ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিকও রুটি-রুজি শুরু হবে।
ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল হেলথের গবেষক ড. লারা গোসচ ২০১৮ সালে তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন গণপরিবহন ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময় তার পরামর্শ ছিল, ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে গণপরিবহন ব্যবহারে ‘পিক আওয়ার’ বা সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলো এড়িয়ে চলা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, প্রথম যখন করোনার বিস্তার দেশে শুরু হয়েছিল তখনই তার বাসে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। তবে বেশিরভাগ বাস ও গণপরিবহনে এটি দেখা যাচ্ছিল না। এখন তো বাস পুরোপুরি বন্ধ। তবে যখন খুলবে তখন তারা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।