Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বক্তৃতা-বিবৃতিতে দায় সারছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো


১৭ মে ২০২০ ১৩:২১

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতাসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের কর্যক্রম চোখে পড়ছে না। কেবল বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে তাদের দলীয় কার্যক্রম।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সাংগঠনিকভাবে তাদের ত্রাণ কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। এ সর্ম্পকে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে একাধিকবার ফোন করে তার সঙ্গে যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে দলটির একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, এরশাদের জাতীয় পার্টি এখন আর নেই। জাতীয় পার্টি এখন একাধিকভাবে বিভক্ত। এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি এখন চারটি ধারায় বিরাজমান। এরমধ্যে দুটি ধারা সরকারের সঙ্গে রয়েছে, দুটি ধারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টির মূলধারার কার্যক্রম কিছুটা দৃশ্যমান। এ ধারার নেতা জি এম কাদেরকে মাঝে মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে। করোনার শুরু পর থেকেই তাকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

দলটির সংরক্ষিত ৪ জনসহ ২৬ জন সদস্য রয়েছে জাতীয় সংসদে। এরমধ্যে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাদ এরশাদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে ত্রাণ বিতরণে সরব দেখা গেছে। অন্যদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। সীমিত পরিসরে ত্রাণ দিয়ে নিজের অবস্থা জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কার্যকর তেমন কোনো কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না তাদের।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি (আন্দালিব রহমান পার্থ) দেশের দুটি স্থানে সীমিত আকারে ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় পার্টির অপর দুটি অংশের কোনো হদিস মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

মহামারি করোনার কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। কর্মহীন এসব মানুষের পাশে সরকার সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগেও প্রশংসনীয় ত্রাণ কার্যক্রম দৃশ্যমান। কিন্তু জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপির দেখা মিলছে না মাঠে ময়দানে। দুটি বিবৃতি দিয়ে নিজের দায় সেরেছেন। টানা ৬বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতার গদিতে আসীন এই নেতার ভূমিকায় সাধারণ জনগণ চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা ভেবেছিলেন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বিত্তশালী এই নেতা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন। সে আশায় গুড়ে বালি। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

একইভাবে নির্বাচন এলেই যাদের মুখে কথার ফুলঝুরি ফোটে সেই নেতারাও অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

সরকারের বাইরে থাকা সবচেয়ে বৃহৎজোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এ পর্যন্ত ৬ লাইনের দুটি বিবৃতি দিয়ে নিজের দায় সেরেছেন। তার নিজের দল গণফোরামের দেখা মিলছে না মাঠে ময়দানে।

গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘না। আমরা দল থেকে কিছু করছি না। এটা সরকার করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দলের প্রতিটা নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি তাদের নিরাপদে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছি। অন্তত ৩৫টি স্পটে আমরা ত্রাণ দিয়েছি। আমরা মিডিয়ায় দেখানোর জন্য করি না। হাদিসেই আছে বাম হাত কী দিল ডান হাত জানবে না। অতএব আমরা ত্রাণ দেওয়ার ছবি দেই না।’

দলীয় কোন্দলের কারণে গত অক্টোবর মাস থেকে নিজদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ড. কামাল। কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতুত্বাধীন অংশের দখলে রয়েছে। এই অংশটিরও তেমন ত্রাণ তৎপরতা নেই। মার্চে ১৩’শ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।

আন্দলিব রহমান পার্থ বলেন, ‘ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি আমি পাবলিকলি আনি না। মিডিয়ায় দেখানোর জন্য ত্রাণ দেই না। আমি শত শত ত্রাণ দিয়েছি। আমি মনে করি, এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। চাইলে আমি অনেক ছবি দেখাতে পারি।’

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। কোনো ধারাই প্রকৃত অর্থে সরব নয় মাঠে। সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি ও তার অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি জাতীয় সংসদের ৬ মাসের বেতন ভাতা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। এর বাইরে তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। মাঝে মধ্যে বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আসম রব’র নেতৃত্বাধীন জাসদের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন উত্তরা এলাকায় কিছু ত্রাণ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে তাও খুবই সীমিত আকারের। জাসদের তৃতীয়ধারার কোনো হদিস মিলছে না। মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর অংশটি ঝিমিয়ে পড়েছে। এ অংশের নেতা নাজমুল হক প্রধান গ্রামের বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে নাগরিক ঐক্য ততটা খ্যাতি-জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারলেও রাজনীতির মাঠে আলোচিত-সমালোচিত নাম মাহমুদুর রহমান মান্না। ডাকসুর সাবেক এই ভিপিকে সরব দেখা যায় বিভিন্ন সেমিনার ও গোলটেবিল আলোচনায়। করোনার কারণে এসব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেলে তিনিও হওয়ায় মিলিয়ে গেছেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বা আমার সংগঠন থেকে অনেক কাজ করেছি। আরো অনেক করতে হবে। বিষয়টা মনে রাখতে হবে ২ কোটি মানুষ দিন আনে দিন খায়, ৭০ দিন লকডাউন চলছে। আমাদের এই সহায়তা সেখানে কিছুই না, তারপরেও কিছু করছি। করোনা মোকাবেলায় সরকার দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তারপরেও বলব, যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে যত পরীক্ষা বাড়াতে পারে তত ভালো।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত বিকল্প ধারারও একই অবস্থা। দলটির দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না।

করোনা করোনাভাইরাস ত্রাণ বিতরণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর