কিশোরগঞ্জে বসে হাইকোর্টে শুনানি, ভার্চুয়াল কোর্টের ভিন্ন অনুভূতি
১৭ মে ২০২০ ১৬:৩০
ঢাকা: কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে হাইকোর্টে জামিন শুনানি করলেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। কোর্ট প্রাঙ্গণের বাইরে থেকে গ্রামের বাড়িতে বসে কোর্টে জামিন শুনানি করা যাবে এমনটি কখনো ভাবনাতেও আসেনি এই আইনজীবীর। ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠার কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বসে মোবাইলের মাধ্যমে জামিন শুনানি করতে পেরে আপ্লুত এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ভার্চুয়াল কোর্ট একটি নবদিগন্তের সূচনা।’
করোনায় লকডাউনে পড়ে দীর্ঘ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। দীর্ঘ দিন আদালত বন্ধ থাকায় ক্লায়েন্টের চাপও বাড়তে ছিল। এরমধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তে আলোর মুখ দেখেন জামিনের অপেক্ষায় থাকা বিচারপ্রার্থীরা।
ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একজনের জামিন চেয়ে কিশোরগঞ্জ বসেই অনলাইনে আবেদন করেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।
তার এই জামিন আবেদনের শুনানির জন্য পূর্বেই তারিখ ঠিক করে দেন বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল আদালত।
আদালতের দেওয়া সময় অনুযায়ী রোববার (১৭ মে) যথা সময়ে অনলাইনে সংযোগ হন আইনজীবী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সংযোগের প্রথমে সাউন্ড পেলেও ছবি না আসায় বিচারপতি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, আপনি কোথা থেকে সংযোগ হয়েছেন? জবাবে আইনজীবী বলেন, মাই লর্ড আমি কিশোরগঞ্জ থেকে। হাওর এলাকা এ জন্য হয়তো নেট আপ-ডাউন করছে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল হাসি দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতির এলাকা বলে হাওরে বসেও নেট পেয়েছেন। ভার্চুয়াল কোর্ট বলে হাওর থেকেই শুনানি করতে পারছেন এই বলে বিচারপতিও হাসি দেন। পরে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানি শেষে আইনজীবী জামিউল হক ফয়সালের কাছে সুদুর কিশোরগঞ্জে বসে হাইকোর্টে শুনানি করার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এই প্রথম আমি ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি করলাম। সত্যি অন্যরকম একটা অনুভূতি। কখনোই ভাবিনি কোর্টে না গিয়ে বাড়িতে বসেই মামলার শুনানি করা যাবে। এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। খুবই ভালো লাগলো। লকডাউনে ঘরবন্দি থাকলেও মামলা চালিয়ে নেওয়া যাবে।
এ আইনজীবী বলেন, প্রথমদিন একটু ভিন্ন অনুভূতি থাকলেও আমার মনে হয়, বাসায় বসে আরও ভালো করে সাবমিশন রাখা যাবে। তবে সকল আইনজীবীকে প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এর আওতায় আনতে পারলে সবাই উপকৃত হবে বলেও মনে করেন তিনি।
এর আগে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথম জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট চালু এদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ। ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথমে আবেদন করতে গিয়ে নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে। সর্বোপরি এটি একটি নতুন ব্যবস্থা। এর সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই। ধীরে ধীরে এর পূর্ণতা পাবে। তাছাড়া সাংবিধানিক কোর্ট এক মুর্হতের জন্যই বন্ধ হতে পারে না। এজন্য এটি চালু করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
প্রথম ভার্চুয়াল কোর্টে রিট আবেদনকারি আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন সারাবাংলাকে বলেন, সব কিছু বন্ধ থাকা সত্বেও ভার্চুয়াল কোর্ট থাকায় হালদায় ডলফিন বন্ধে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। এটি ভার্চুয়াল কোর্ট থাকার কারনেই সম্ভব হয়েছে। আদালতে না গিয়ে বাসায় বসে শুনানি করে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির অনুভুতি আসলেই অন্য রকম। ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি করে খুবই ভালো লেগেছে।
করোনার কারনে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ছিল দেশের সব আদালত। অবশেষে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গত ১১ মে থেকে শুরু হয় ভার্চুয়াল আদালত। প্রতিদিন হাইকোর্টসহ দেশের বিভিন্ন ভার্চুয়াল আদালত থেকে শত শত মানুষের জামিন হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ৬ মে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা। পরে সেটি অধ্যাদেশ জারি করতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনমন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে।