Tuesday 01 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপর্যয়ের মুখে কিন্ডারগার্টেন স্কুল, সরকারি সহায়তার অপেক্ষায়


১৯ মে ২০২০ ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ০৮:৩৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও। এর ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে চরম বিপর্যয়ের মুখে। স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ভাড়া, শিক্ষকসহ কর্মচারীদের বেতন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। ছুটি আরও দীর্ঘ হলে স্কুল টিকবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শিক্ষকদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ছাড়া এসব কিন্ডারগার্টেনের আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই বললেই চলে। আবার শিক্ষকদেরও আয়ের অন্যতম উৎস টিউশনি। এর সবই এই করোনায় বন্ধ। ঈদের ছুটির পর স্কুল চালু করা সম্ভব না হলে এসব পরিবারের আয়-রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিক ও শিক্ষকরা বলছেন, সেক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে তারা কোনোভাবেই বের হতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী উত্তর বাড্ডার ডাইনামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল খায়রুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৭ মার্চ থেকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের আয়-রোজগারও। দুই মাস ধরে সবার বেতন-ভাতা বন্ধ। কিন্তু প্রতি মাসে একলাখ টাকা বাড়ি ভাড়া। সেটার জন্য বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। অভিভাবকদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা যাচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছি না।

খায়রুল বাশার বলেন, আমাদের স্কুলটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানেরা লেখাপড়া করে। বেতন অনেক কম। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। প্রতি মাসে কিছুটা ঘাটতি থাকে। পরীক্ষার ফি নিয়ে সেসব ঘাটতি পূরণ করা হতো। এর মধ্যে দুই মাস স্কুল বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়ে গেল। শিক্ষকদের বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে তাদের চরম হতাশায় দিন কাটছে। এ অবস্থায় সরকারের একান্ত সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

রত্মগর্ভা ফরিদা জামান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও স্বত্বাধিকারী ফেরদৌসী বেগম সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। আমরা বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে যতটাসম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানের আয়-রোজগারও একদম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমাদের মতো এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা অবদান রয়েছে। শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে এত শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগও নেই। তাই করোনার এই দুর্যোগে সরকারের উচিত আমাদের সহায়তা করা। সরকারই আমাদের অভিভাবক। সরকার আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, কিন্ডারগার্টেন, তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল এবং কলেজগুলো সরকার বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো ধরনের সাহায্য ছাড়াই চলে আসছে। সরকারি হিসাবেই এর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশিও হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এই ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। একইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে।

ইকবাল বাহার বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত বলে মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৪০ শতাংশ ঘর ভাড়া ও ৪০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় চলে যায়। বাকি ২০ শতাংশ বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আশঙ্কা করছি, শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই হবে দূরুহ কাজ।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের সহায়তা কামনা করে ইকবাল বাহার বলেন, স্কুলের বেতন-ভাতা তো বটেই, আমাদের অনেকের শেষ আশ্রয়স্থল প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। এই করোনা মহামারিতে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় পোশাককর্মী, কৃষকসহ বিভিন্ন খাতের মানুষ ব্যাংক থেকে নানাভাবে সাহায্য পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছি, আমাদের কী হবে? আমাদের তো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণও দেয় না। ফলে সরকারের সহায়তা ছাড়া বিকল্প নেই। সরকারের সাহায্যের ওপরই এসব প্রতিষ্ঠানের আগামী দিনের পথচলা নির্ভর করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করেছি। এখন মোবাইল, রেডিও ও অনলাইন— এই তিনটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেন সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারি, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।

চীনের উহান থেকে গত বছরের শেষ দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ঝুঁকি এড়াতে ১৭ মার্চ থেকেই সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

করোনাভাইরাস কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর