চট্টগ্রামে সরানো হচ্ছে উপকূলের বাসিন্দাদের, পাহাড় ছাড়ার নির্দেশ
১৯ মে ২০২০ ২১:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডব থেকে বাঁচাতে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু করলেও তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে লোকজন রাখা নিয়েও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে প্রশাসন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৯ মে) বিকেল থেকে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী ছয়টি উপজেলা এবং নগরীর সাগর সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এর পাশাপাশি মেডিকেল টিম গঠনে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার কাজেও নিয়োজিত করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা নদী ও সমুদ্র উপকূলে। এগুলো হচ্ছে সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী ও মীরসরাই। চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় দুপুরের পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির বেগ কিছুটা বেড়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ছয়টি উপজেলা এবং নগরীর পাঁচ-ছয়টি ওয়ার্ডের একেবারে নদী ও সাগর উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের সরানো শুরু করেছি। তীরবর্তী মানুষ তো একেবারে ঝড়-বৃষ্টি শুরু না হলে সরতে চায় না। এরপরও আমরা ১৫ হাজারের মতো মানুষ সরিয়েছি। সরাতে হবে অন্তঃত কয়েক লাখ। আমাদের ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেখানে লোকজনকে রাখা হচ্ছে। স্কুল-কলেজগুলোও প্রস্তুত করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে যতটুকু রাখা যায়, সেটা চেষ্টা করছি আমরা।’
মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়ন, সন্দ্বীপের আজিমপুর, উরিরচর, মাইটভাঙাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হয়। একইভাবে অন্য উপজেলায়ও মাইকিং করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের সন্ধ্যা থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর কাট্টলী এলাকার জেলেপল্লীর প্রায় ২৫০ পরিবারকে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আড়াইশ’র মতো পরিবারকে আমরা সরিয়ে নিয়েছি। নগরীর লালখানবাজার, মতিঝর্ণা, বাটালি পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। আমরা মাইকিং অব্যাহত রেখেছি।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আমাদের সামাল দিতে হচ্ছে। এরপরও ঝড়ের জন্য ২৮৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। কিছু টিমের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা। আবার কিছু দলের প্রধান স্বাস্থ্য পরিদর্শক। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওষুধ মজুদ আছে।’
জানা গেছে, জেলা সিভিল সার্জনের কাছে ২ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং দেড় লাখ খাওয়ার স্যালাইন মজুদ আছে। এছাড়া ১৪ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত আছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগদ টাকা, চাল, শুকনো খাবার, টিনের বান্ডিল, তাবুসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী মজুদ আছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাগরের কাছাকাছি ১০টি ওয়ার্ডে ১০টি মেডিকেল টিম, করপোরেশনের ১০টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নগরীতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে।