কাছাকাছি আম্পান, তবুও সরছে না উপকূলের বাসিন্দারা
২০ মে ২০২০ ১৩:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও মেঘলা আকাশে গুমোট ভাব, সঙ্গে হালকা বাতাসও বইছে। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় উত্তাল সাগর থেকে ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় আছড়ে পড়ছে তীরে।
এদিকে মোংলা ও পায়রার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরকেও ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের বদলে ৯ নম্বর ‘মহাবিপদ সংকেত’ দেখাতে বলা হয়েছে। কিন্তু আঘাত হানার সর্বোচ্চ শঙ্কার মধ্যেও সরছে না উপকূলবর্তী এলাকার লোকজন। তাদের সরাতে যথারীতি বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী ৬টি উপজেলা এবং মহানগরীর অন্তত পাঁচটি ওয়ার্ডে প্রায় চার লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এদের মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আরও লাখখানেক মানুষ। তাদের সরাতে না পেরে কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামেও মহাবিপদ সংকেত, বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষকে সরানো আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। মনে হয়, শেষ পরিণতি না দেখে তারা বাড়িঘর ছেড়ে যাবেন না। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে আমরা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর কাজ শুরু করেছি। আজ (বুধবার) বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫৩ হাজারের মতো মানুষ সরাতে পেরেছি। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত লাখখানেক মানুষকে সরানো যাবে। তবে সাগর তীরবর্তী পরিবারগুলোকে মোটামুটি সরানো গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো আবার করোনা পরিস্থিতি। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতিও আছে। আমাদের সামাজিক সংক্রমণের বিষয়টিও মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী ৬টি উপজেলা হচ্ছে- সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা, বন্দর, ইপিজেড বেড়িবাঁধ, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় সাগর তীরে মানুষের বসতি আছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার মধ্যে আমরা কাট্টলী এলাকার আড়াইশ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি। রাতের মধ্যে বন্দর-ইপিজেড আকমল আলী রোডের জেলেপাগড়া থেকে আরও ১৫০ পরিবারকে সরানো হয়েছে। কিন্তু এগুলো অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো হচ্ছে। আমরা তাদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আসছি। তারা আবার বিভিন্ন অজুহাতে বের হয়ে বাড়িঘরে চলে যাচ্ছে। অনেকে স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে নিজে বাড়িতে থেকে যাচ্ছেন। রাতে এমনও দেখেছি, দরজায় তালা অথচ ভেতরে লোকজন ঘুমাচ্ছেন।’
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরাতে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে মাইকিং চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্য এবং পুলিশ নিয়ে আমাদের টিম বিভিন্ন পাহাড়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছেন, তাদের কাছকাছি আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হয়েছে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি-বেসরকারি সব পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের উচ্ছেদ করেছি, গ্যাস-বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছি। এরপর অনেকেই পাহাড় থেকে চলে গেছেন। কিন্তু যারা আবারও সেখানে বসতি গড়েছেন সেখানে থেকে এখন সরানোর দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বলেছি, তারাই যেন সরিয়ে নেন সেখানকার বাসিন্দাদের।’
এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তখন এর বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বা তার বেশি।