আম্পানে লণ্ডভণ্ড সাতক্ষীরা, গাছচাপায় নারীর মৃত্যু
২১ মে ২০২০ ১৭:৫৪
সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা। গাছপালা উপড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। আর গাছচাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন উপজেলাগুলোর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে।
জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, বুধবার (২০ মে) বিকেল চারটার দিকে ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে পশ্চিম দিকে ঝড়ো হাওয়াটি জেলা শহরের ওপর আঘাত হানে।
আম্পানে সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ায় এবং খুঁটি উপড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্পটে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ১৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১ হাজার ৭০০টি স্কুল কলেজসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে তালিকা তৈরির কাজ করছে। তাদের কাছ থেকে তালিকা পেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মরিচ্চাপসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২/৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ও গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার দয়ারঘাট, হাজরাকাটি, কুড়িকাউনিয়া, মনিপুরি ও বিছট এলাকার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা। ওই এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মত বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া কামালকাটি ও চন্ডিপুর এলাকায় উপচে ওঠা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখানি ও নাপিতখালী এলাকায় বাঁধ ভেড লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, হিজলা, দিঘলাররাইট, কোলা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, আম্পানের কারণে নদীর পানি ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নদীর প্রবল জোয়ারে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দাঁতনেখালি, দুর্গাবাটি, পদ্মপুকুর ও গাবুরার বেশকয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়া কাঁচা ও টিনের ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ-গাছালি উপড়ে রাস্তাঘাট এবং বাড়িঘরেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।