বদরগঞ্জের চাল উদ্ধারের প্রকৃত কারণ এখনও তদন্তাধীন
২১ মে ২০২০ ২০:০২
ঢাকা: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার সংকরপুর এলাকা থেকে ৫৪ বস্তা চাল উদ্ধারের পেছনের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধারকৃত চাল ত্রাণের নয়। বস্তাগুলোতে কয়েক ধরনের চাল ছিল। আর যিনি চালগুলো পাঠিয়েছেন, তিনিও একজন ব্যবসায়ী। এসব কারণে উদ্ধারকৃত চাল ত্রাণের নয় বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।
পুলিশও বলছে, চালগুলো ত্রাণের নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ-নেটওয়ার্ক না থাকায় তদন্ত পুরোদমে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখনো এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চাল নিয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
বুধবার (২০ মে) বদরগঞ্জের সংকরপুর এলাকা থেকে ৫৪ বস্তা চাল আটক করে স্থানীয় পুলিশ। চাল নিয়ে যাওয়ার পথে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা ত্রাণের চাল মনে করে থানায় যোগাযোগ করে। পরে পুলিশ চালসহ তিনজন অটো ড্রাইভারকে আটক করে।
আরও জানা গেছে, আটকের পর অটোরিকশার চালকরা স্বীকার করেছেন, চালের বস্তাগুলো পাশের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের কেশবপুরবাজার থেকে আনা হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বদরগঞ্জে চালের বস্তা পৌঁছে দিতে বলেছিলেন।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাওলাদার বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার দিকে ৫৪ বস্তা চাল আটক করে আমরা নিয়ে এসেছি। স্থানীয় ও সাংবাদিকদের তথ্যের ভিত্তিকে আমরা চাল আটক করি। তবে চালের মালিক পালিয়ে গেছে। পরে আমরা চালসহ তিন জন ড্রাইভারকে থানায় নিয়ে এসেছি। তারা থানায় আছে। চালগুলো পাশের থানা মিঠাপুকুর থেকে এসেছে। চালগুলো সরকারি কোনো বস্তাতে ছিল না, রশি দিয়ে বস্তার মুখ বাঁধা ছিল। কোনো একটি গোডাউনে এই চাউল দেওয়ার কথা ছিল। আমরা ড্রাইভার ও গাড়ি থানায় নিয়ে এসেছি। ড্রাইভারদের বাড়ি মিঠাপুকুরে। তবে চাউল দেখে এটি ত্রাণের মনে হয়নি। তারপরও আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।’
এদিকে, বিকেলে বদরগঞ্জের ওসি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি ত্রাণের চাল নয়, তাও বলা যাবে না। আবার এই চাল যে ত্রাণের চাল, সেটিও বলা যাচ্ছে না। চালের মালিক লিটন নিজেও চাল ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাল দেন। আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসিনি। নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক জায়গায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
মালিক লিটনের পালিয়ে যাওয়া ও সাহেব নামের এক চেয়ারম্যানের যোগসাজস থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘লিটনের বাড়ি আরেক থানায়। সেখানে কোনো চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। আর চালের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউএনও, এসপি স্যার সিদ্ধান্ত নেবেন। কেউ কারও সঙ্গে এখন যোগাযোগ করতে পারছেন না। মামলা হলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
বদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও শরিফুল আলম সারাবাংলাকে দুপুরে বলেন, ‘বদরগঞ্জ থেকে ৫৪ বস্তা চাল আটক করা হয়েছে। চালের কন্ডিশন অনুযায়ী এটি ত্রাণের চাল হওয়ার কথা না। চালের মালিক পাশের থানা মিঠাপুকুরের। এখানে কোনো একটি আড়তে বিক্রি করার কথা ছিল। আড়তদারের নম্বর থানায় আছে। আমরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করছি। চূড়ান্ত কিছু এখনই বলা যাচ্ছে না।’
তবে বিকেলে ইউএনও সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিটন নামে যে ব্যক্তির নামটি এসেছে, সে মাঝেমধ্যেই চাল নিয়ে এসে বিক্রি করে। সে সেখান থেকে স্থানীয়ভাবে (মিঠাপুকুর থেকে) চাল কিনে। তবে কোথা থেকে কিনেছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চালগুলোর বস্তায় সরকারি কোনো সিল নেই। আমরা বেশিরভাগ চালের বস্তা দেখেছি। কোনো সিল পাওয়া যায়নি। বাকিগুলোতে সিল না পেলে আমরা তাদেরকে ছেড়ে দেবো।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো ত্রাণের চাল নয়, কয়েক দফায় কয়েক জায়গা থেকে কালেক্ট করেছে। কোনো বস্তা গমের, আবার কোনোটি চালের। অর্থাৎ বস্তাগুলোও এক রকম নয়। আর চালগুলোও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। সন্দেহের কারণে তাদের আটক করা হয়েছিল। চালগুলো যেন লুট না হয় সে জন্য তা থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল।’
এদিকে মিঠাপুকুর থানার ওসি জাফর আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বদরগঞ্জে তিন অটোতে চাল পাওয়া গেছে। ড্রাইভার নাকি বলেছে, মিঠাপুকুরের কেশবপুর থেকে লিটন নামে একজন অটোতে চালগুলো উঠিয়ে দিয়েছে। বদরগঞ্জ থেকে তথ্য পাওয়ার পর লিটনকে আমরা খুঁজেছি। তাকে পায়নি। শুনেছি সে মৌসুমী ব্যবসা করে। আমরা তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করছি।’
জানতে চাইলে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’