Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দেশে ফেরা প্রবাসীদের ৮৭ শতাংশের এখন আয়ের কোনো উৎস নেই’


২২ মে ২০২০ ২০:৪০

ঢাকা: বিশ্বে মহামারি রূপ ধারণ করা কোভিড-১৯ এর প্রভাব সব খাতে পড়েছে। গত আড়াই মাসে দেশের জনশক্তি রফতানি যেমন শুন্যে নেমেছে, তেমনি বাড়ছে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরে আসার সংখ্যা। প্রবাসে কর্মহীন হয়ে দেশে ফিরে আসা কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই এখন কোনো আয়ের উৎস নেই। নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ৫২ শতাংশ বলছেন, তাদের জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (২২ মে) ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জরিপটি প্রকাশ করা হয়।

বলা হয়, করোনার কারণে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছেন এমন ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৮৬ শতাংশই ফিরেছেন মার্চে। জরিপর অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ ‍এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন ওমান এবং কুয়েত থেকে। বাকিরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন।

ব্র্যাকের ২০ জন কর্মী ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা এবং যশোরে রয়েছেন এমন প্রবাসীদের ওপর জরিপটি চালিয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনার কারণে তারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ৩৫ শতাংশ বলছেন, ‘তারা ছুটিতে এসেছিলেন।’ ১৮ শতাংশ বলেছেন, ‘তারা পারিবারিক কারণে চলে এসেছেন’। আর ৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের ফেরার সাথে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই।

কোয়ারেনটাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ বলেছেন, তারা ১৪ দিনের কোয়ারেনটানে ছিলেন। ১৪ শতাংশ বলেছন, তারা কোয়ারেনটাইন ঠিকমতো মানতে পারেননি। দুই শতাংশ বলেছেন, তারা এক সপ্তাহ কোয়ারেনটাইনে ছিলেন।

ফেরত আসার পর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সিলর অবশ্য তাদের সবাইকে মনোসামাজিক সেবা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

২৯ শতাংশ অভিবাসী বলেছেন, তাদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনেরা তাদের ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি এবং তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাচ্ছে না। তবে ৯৭ শতাংশ বলেছেন, এক্ষেত্রে পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জানান, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯ শতাংশ জানান, তাদের যে সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ১০ শতাংশ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তারা ঋণ গ্রহন করেছেন। ১৪ শতাংশ প্রবাসী তাদের সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।

মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকার গ্রহনের মাধ্যমে পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ফেরত আসা অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ এখনও জীবিকা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি। ৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা পুনরায় বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন। বাকিরা কৃষিভিত্তিক ছোটো ব্যবসা, মুদি দোকান বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন।

বিদেশফেরত এই অভিবাসীরা কোন ধরনের সহায়তা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ৯১ শতাংশ বলেছেন, তারা এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোন জায়গা থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। বাকি ৯ শতাংশ সরকারি বা বেসরকারি কোন না কোনো জায়গা থেকে সামান্য হলেও সহযোগিতা পেয়েছেন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘বিদেশফেরত প্রবাসীদের বর্তমান অবস্থা, তাদের সংকট এবং করোনা তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর কী কী প্রভাব ফেলেছে সেটা জানতেই এই জরিপ। ফেরত আসা ৮৭ শতাংশেরই এখন কোনো আয়ের উৎস নেই। সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি শুধু সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে। কারণ এই প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সবসময় সচল রেখেছেন। এমনকি করোনার সময়ও তারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে শুধু মে মাসের ১৯ দিনে ১০৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। আর জানুয়ারি থেকে ধরলে মোট তারা পাঠিয়েছেন ৫৫ হাজার কোটি টাকা। কজেই এই সংকটময় সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে যারা বিদেশে আছেন এবং যারা ফিরে আসছেন।’

সমস্যা সমাধানে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। এগুলো হলো- ফিরে আসা প্রবাসী ও তাদের পরিবারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি নিরূপণ করে মনোসামাজিক সহায়তা কর্মসূচি নেওয়া, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে সহজ শর্তে বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা, গন্তব্য দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা যেন কাজে ফিরতে পারেন সেই উদ্যোগ নেওয়া।

আয়ের উৎস করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ জনশক্তি প্রবাসী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর