Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দূষণ-চোরাশিকার বন্ধের সুফল, হালদায় রেকর্ড ডিম সংগ্রহ


২২ মে ২০২০ ২০:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে এবার কার্প জাতের মা মাছ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। দূষণ-বালু উত্তোলন, চোরাশিকার প্রায় বন্ধ হওয়ায় এবার গত একযুগে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হালদা থেকে এবার ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ হয়েছে, যা গতবছরের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি। ২৮০ টি নৌকায় ৬১৫ জন মিলে এই ডিম সংগ্রহ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২২ মে) সকাল ৭ টা থেকে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম ছাড়তে শুরু করে মিঠা পানির মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে কিছু নমুনা ডিম ছাড়ার পর পরিবেশ অনুকূল পেয়ে শুক্রবার সকালে মা মাছ পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সরকারি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা পিকেএসএফ-আইডিএফ যৌথভাবে এই কার্যক্রম তদারকের পাশাপাশি ডিমের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনও সার্বিকভাবে তদারকিতে ছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ দেখেছিলাম। এবার আরও বেশি ডিম পাওয়া গেছে। গত ১২ বছরে সবচেয়ে বেশি ডিম এবার পাওয়া গেছে।’

চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার ‍দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে হালদা নদী। দুই উপজেলায় হালদা নদীর সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়ে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর ডিম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হালদা পাড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। ডিম সংগ্রহ শেষে নৌকাগুলো শুক্রবার দুপুর থেকে তীরে ভিড়তে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।

তবে এবার অমাবস্যা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে।

হালদা গবেষক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়ার মতে, কারখানা বন্ধ করে দূষণ ঠেকানো, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, মানিকছড়ি পাহাড়ে তামাকচাষ বন্ধ করা, বছরব্যাপী চোরাশিকারি ও বালু উত্তোলনকারীদের তৎপরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকায় এই সুফল এসেছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এশিয়ান পেপার মিল ও ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত একবছরে ১০৯ বার হালদা নদীতে ভ্রাম্যমাণ অাদালতের অভিযান চালানো হয়েছে।’

ইউএনও জানান, গত একবছরে হালদার অভিযানে ২ লাখ ২১ হাজার মিটার ঘেরাজাল জব্দ করা হয়েছে, যেগুলো দিয়ে মা মাছ শিকার করা হচ্ছিল। বালু উত্তোলনকারী ৯টি ড্রেজার ও ১৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটারেরও বেশি বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ ধ্বংস করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু।

হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা ডিম পাড়ে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রস্তুত বিভিন্ন কুয়ায় রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রথমে রেণু ফোটানো হবে এবং পরে রেণু থেকে পোনা হবে।

মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এবার ডিমের মান খুব ভালো। আশা করছি ভালো পরিমাণে রেণু হবে। ইদের পর আমরা বৈঠক করে কি পরিমাণ রেনু হয়েছে, সেটা নির্ধারণ করব। এছাড়া রেণু উৎপাদনের সময় ডিম যাতে নষ্ট না হয়, সেটাও আমরা মনিটরিং করব।’

২০১৯ সালে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

টপ নিউজ ডিম ডিম সংগ্রহ মাছ হালদা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর