ভবিষ্যতের বিমানযাত্রায় আসছে পরিবর্তন
২৩ মে ২০২০ ১১:৫৭
ঢাকা: করোনাভাইরাস সবকিছুতে হেনেছে আঘাত। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুকে করেছে ভঙ্গুর। আকাশপথ থেকে নৌপথ সব পথের যাত্রায় দিয়েছে বাধা। যার জন্যে ভবিষ্যতে বিমানযাত্রায় আসছে আমুল পরিবর্তন। কীভাবে বিমানের যাত্রাকে ঢেলে সাজানো যায় তা নিয়ে এরইমধ্যে কাজও শুরু করেছে বিমান সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিমান পরিচালনায় এরইমধ্যে একটি গাইডলাইনও দিয়েছে বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে।
বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে— নতুন নিয়মে ফ্লাইট এন্টারটেনমেন্ট, ককপিট ও কেবিন ক্রুর পাশাপাশি যাত্রীদের ড্রেস কোড তথা আচরণবিধি পাল্টে যাবে। প্রতিটি উড়োজাহাজের এক-তৃতীয়াংশ আসন খুলে ফেলে যাত্রীদের ন্যূনতম ২ মিটার দূরত্ব তৈরি করা হবে। ক্রু ও যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হবে। হবে না ঘন ঘন খাবার সরবরাহ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে নতুন নিয়মেই চালাতে হবে ভবিষ্যতে ফ্লাইট।
শুধু তাই নয়, বাধ্যতামূলকভাবে ফেস মাস্ক ও সার্জিকাল গ্লাভস ব্যবহার, সেলফ চেক ইন, সেলফ ব্যাগ ড্রপ অব, ইমিউনিটি পাসপোর্ট, ব্লাড টেস্ট, স্যানিটেশন ডিসইনফেক্ট টানেলে প্রবেশ করতে হতে পারে যাত্রীসহ বিমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি পাসপোর্ট যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াতেও আসবে পরিবর্তন। এরপর নিজের সুস্থতার প্রমাণ দিতে হবে। বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকার আগেই শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও লাগেজ স্যানিটাইজ করাতে হবে। সব শেষে যেতে হবে আল্ট্রাভায়োলেট ডিসইনফেকশনের মধ্যদিয়ে।
এ সব বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমান সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর ফ্লাইট চালু হলে চেক-ইন, ইনফ্লাইট সার্ভিস, ক্রুদের মুভমেন্টসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এ ছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তাপপাত্রা মাপতে হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি এর বেশি হলে তাকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হবে না। এ ছাড়া যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠার আগে একটি প্যাসেঞ্জার হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। কার্ডে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যার উত্তর সন্তোষজনক না হলে তারা ফ্লাই করতে পারবেন না। এছাড়া সবাইকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে ‘সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন’ নিতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্তের পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই ফ্লাইট ছাড়বে।
ফ্লাইটের ভেতরের পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ফ্লাইটে খাবার আগের মতো সরবরাহ করা হবে না। এটিতে পরিবর্তন আসবে। দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা হবে না। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে যা আগে থেকেই একটি ইন্টাক্ট বক্সে রাখতে হবে। দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের যাত্রীদের শুকনা খাবার দিতে হবে যা বিমানে ওঠার আগেই সরবরাহ করতে হবে। ফ্লাইটের সময় যদি চার ঘণ্টার বেশি হয় তবে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখতে হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। কারও তাপমাত্রা যদি ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে ক্রুরা আগে থেকেই ডেসটিনেশন এয়ারপোর্টকে জানাবে যাতে প্লেন ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আসবে সামনে বিমানযাত্রায়।
ভবিষ্যতে বিমান যাত্রার বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলমান করোনা মহামারীতে কীভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে, কীভাবে যাত্রীর বোর্ডিং হবে, কীভাবে চেকইন হবে, ইনফ্লাইটে কীভাবে ক্রুরা তাদের ডিল করবেন, সে সবই আইকাও-এর গাইডলাইনে দেওয়া হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে সেই গাইডলাইন পেয়েছি। আইকাও গাইডলাইনে বিস্তারিত রয়েছে। ফলে এটা আশা করা হচ্ছে, সামনে বিমানযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা করোনা মহামারীতে বিশ্বে এখনো যেহেতু কোনো ভ্যাকসিন আসেনি তাই আমাদের যাত্রায় পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
ভবিষ্যতে বিমান যাত্রা কেমন হতে পারে তার একটা বিশদ ধারণা দেন বিমান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানে সামাজিক দূরত্ব মানতে বিমানের মাঝখানের সিট সরিয়ে ফেলার পরামর্শও আসছে। এরইমধ্যে ইতালির একটি বিমান কোম্পানি বিমানের কেবিন নতুনভাবে নক্সার এক অভিনব আইডিয়া দিয়েছে। এতে বিমানে অতিরিক্ত জায়গা বা মাঝের সিট সরানোর প্রয়োজন হবে না। এক সারিতে তিন সিটের ‘জানুস’ আসন, যার মাঝেরটি বিপরীতমুখী। প্রাচীন রোমান গড জানুসের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম সারির প্রথম আসনটি একদিকে মুখ করানো থাকবে আর মাঝেরটি বিপরীত দিকে ঘোরানো এবং তৃতীয়টি প্রথমটির মতোই হবে। এভাবে দ্বিতীয় সারির আসন তিনটি হবে প্রথম সারির বিপরীতমুখী। এই আসনগুলো পরিষ্কার সহজ হবে। এক আসন থেকে আরেক আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ আইসোলেশন নিশ্চিত হবে। এতে এক যাত্রীর নিশ্বাস-প্রশ্বাস থেকে অন্য যাত্রী নিরাপদ থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমান পরিচালনায় বাংলাদেশেও পরিবর্তন আসবে। আইকাও নিয়মানুযায়ী আমাদের বিমান চালাতে হবে। কারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা সবার আগে। কারণ বিশ্বব্যাপী বিমান চলে আইকাও এর নিয়ন অনুযায়ী।’