Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাসায় বাচ্চা বলছিল ‘আম্মু আমার সঙ্গে ঈদের দিনটা থাকবে না?’


২৫ মে ২০২০ ১৭:৫০

ঢাকা: ‘আজকে ল্যাবরেটরিতে আসার আগে বাসায় বাচ্চা বলছিল, আম্মু আজকে তো ঈদ। আমার সঙ্গে ঈদের দিনটা থাকবে না? কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে এসেছি। গতকালই অবশ্য ঈদের রান্না করে ফেলেছি’ কথাগুলো বলছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফা আকরাম বর্না। যিনি বাসায় ১০ বছর বয়সী বাচ্চাকে রেখে চলে ঈদের দিন চলে আসেন ডিউটিতে।

বিজ্ঞাপন

এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা এই প্রতিষ্ঠানে ঈদের দিনেও রোস্টার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আরিফা আকরাম বর্নাসহ অন্যরা।

বর্না বলেন, ‘আসলে নিজের কাজটাও তো দেখতে হবে। আর দেশে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে তখন একদিন যদি ল্যাবরেটরিতে নিজের দায়িত্বে না যাই তবে অনেক পরীক্ষার ফলাফলও তো আটকে যেতে পারে। হ্যাঁ একজন মা হিসেবে কিছুটা খারাপ লাগছিল কিন্তু দেশের কাজে আসলে পিছিয়ে থাকতে চাই না আমরা। কেউ যদি বলে শুধুমাত্র সরকারি আদেশের কারণে সবাই দায়িত্ব পালন করছে তবে সেটা আসলে পুরোপুরি সঠিক হবে না বলা। কারণ আমরা সবাই দেশেরই সন্তান আর দেশের প্রয়োজনে আমরা কাজ করে যেতে চাই।’

ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘সবারই লক্ষ্য একটাই। তা হলো, কোনোভাবেই যেনো যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নমুনা পরীক্ষা করাতে আসছেন তাদের সেবা বঞ্চিত না হতে হয়। দ্রুততার সঙ্গেই যেনো পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেওয়া যায়।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা আছে সব ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করে যাওয়ার বিষয়ে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের আসল লক্ষ্য একটাই। আর তা হলো দেশের সেবা করে যাওয়া।’

ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু সহ অন্যান্যরা।

ড. সুলতানা শাহানা বানু সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বজনদের বাসায় রেখে আমাদের এখানে চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট সহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। আজকে নমুনা সংগ্রহও করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষাও করা হচ্ছে। স্বজনদের রেখে ঈদের দিনে দায়িত্ব পালন করতে পারছি আমরা দেশের জন্য। এটাও কিন্তু একটা গর্বের বিষয়। অন্তত দেশের জনগণের জন্যেই তো আমরা কাজ করে যেতে পারছি। যারা রোগী, যারা বিভিন্নভাবে এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন তারাও কিন্তু হাসপাতালে ঈদ করছেন। আমরা তাদের সেবা দিতে পারছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে এটি গর্বের বিষয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে পারাটাও কিন্তু এক ধরনের এবাদত। সেটির জন্য অন্য সব কিছু আমরা ভুলে যেতে চাই। আত্মীয়স্বজন ছেড়ে ঈদ করার কষ্টটা কমে যায় তখন যখন ভাবি আমরা তো দেশের জন্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ছাড়াও আসলে বাকি যারা কাজ করছেন আমার মনে হয় সবাই এখন শুধুমাত্র দেশের কথাই ভাবছেন।’

নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালের (খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো.শামসুদ্দোহা সরকার সঞ্চয়। ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হাসপাতালে।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন,‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিন্তু যে কোনো ছুটির সময়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বলা যায় ৩৬৫ দিনই কিন্তু এখানে সেবা দিয়ে যাই আমরা। আর বর্তমান সময়ে এখন যেহেতু একটা বিপর্যয় যেখানে মানবতাই হুমকির সম্মুখীন সে কারণে চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি। সবাই নিজের কমিটমেন্টের জায়গা থেকে নিজেদের সেরা কাজটাই করে যাচ্ছে প্রতিদিন। এমনকি আজকেও তারা সেভাবে কাজ করছে আর সেজন্য আলাদাভাবে কিছু বলতেই হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর সময়েও আমরা দায়িত্ব পালন করে গেছি। তবে সেই সময়ের সঙ্গে এবার কিছুটা প্রার্থক্য আছে। তখন অন্তত দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় যাওয়া গেছে। এবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কিন্তু সেই সুযোগ কম। যারা দায়িত্ব পালন করছে এখন তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে হলেও আলাদাভাবে থাকতে হচ্ছে। কারণ বাসায় গেলে অন্যান্যরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে আবার যে বাসায় যাবে সেখানেও কিছু সমস্যার বিষয়ে তো আমরা গণমাধ্যমেই দেখেছি। তাই আসলে একটা কঠিন সময় সবার জন্য। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য তো অবশ্যই কঠিন সময়। গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মীরা কিন্তু সরাসরি পজেটিভ রোগীদের সংস্পর্শে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন জন টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তাও কিন্তু কাজ থেমে নেই। নিজে আক্রান্ত হতে পারে জেনেও কিন্তু নমুনা সংগ্রহের সময় খুব কাছে থেকেই তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। আমি মনে করি এটার জন্য অনেক বড় মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। এভাবেই আসলে সবাই কাজ করে যাচ্ছে।’

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ডা. সঞ্চয় বলেন, ‘সবাই যদি নিজেদের পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারি তবে সুস্থ থাকবে আমাদের সমাজ। আর এভাবে আমাদের দেশকেও কিন্তু আমরা বাঁচাতে পারি। দেশের জন্য আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করে যাই তবে আসলে খুব দ্রুত এমন বিপর্যয় কাটানো সম্ভব হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। ঈদের দিনেও তিনি এসেছেন কার্যালয়ে। নিয়মিত দায়িত্ব হিসেবে স্বাস্থ্য বুলেটিন জানানো ছাড়াও করে যাচ্ছেন নিজের দাপ্তরিক কাজ।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন কাজ করে যাচ্ছেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সবাই যখন কাজ করে যাচ্ছেন তখন আমরাও কিন্তু আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খুব দ্রুত আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের ছুটিতেও হাসপাতালের সকল কার্যক্রম যাতে স্বাভাবিক থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। দেশের সকল ল্যাব যেনো চালু থাকে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আর এজন্য আসলে কাউকে আলাদাভাবে কিছু বলতে হয়নি। সবাই এখানে মানসিক ভাবে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আশা করছি, সবাই মিলে যদি আমরা এভাবে এগিয়ে যাই দেশের জন্য তবে খুব দ্রুত এই কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’

করোনাভাইরাস চিকিৎসক নমুনা টেস্ট হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর