ঢাকার শিশুরা আনন্দেই আছে, মলিন উপকূলের শিশুদের ঈদ
২৫ মে ২০২০ ২১:৩৫
ঢাকা: করোনার সংক্রমণ এড়াতে সরকার স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক দিন থেকেই শিশুরা ঘরে আটকা। ঘরে থেকেই তারা অলস সময় কাটানোর পাশাপাশি কিছুটা পড়াশোনাও করছে। এর মধ্যেই এসেছে ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই স্ফুর্তি উড়িয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানো। বিনোদন পার্কে হরেক রকমের আনন্দ আয়োজনের খোঁজে ছুটে যাওয়া। কিন্তু করোনাকালের জন্য এবার এগুলো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বলে তো আর ঈদ আনন্দ মাটি করে দেওয়া যায় না! এজন্য ঘরে বা বাসার ছাদে যে যেভাবে পারে উদযাপন করেছে এবারের ঈদ উৎসব।
এটা হলো রাজধানী ঢাকার চিত্র। কিন্তু উপকূলের জেলাগুলোর শিশুদের ঈদ আনন্দ অনেকটাই মলিন। করোনার পর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পাল্টে গেছে উপকূলের শিশুদের জীবনযাপন। ধ্বংসপ্রলয়ে মলিন হয়ে গেছে তাদের ঈদ আয়োজন। আম্পানের কারণে উপকূলের শিশুদের মানসিক অবস্থাও এবার নাজুক ছিল। ঈদের মাত্র চারদিন আগে হওয়া এই ঝড়ের স্মৃতি ভুলে যাওয়া কঠিন। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুদের জীবনে এবারের ঈদ কোনো আনন্দ বয়ে আনতে পারেনি।
এদিকে ঈদের দিন বিকেলে পুরনো ঢাকার আকাশে উড়েছে শত শত ঘুড়ি। কোনো কোনো ছাদে বাজছে ধুন্ধুমার গান। মহামারির সময়ে বাইরে ঘুরতে মানা। তাই আনন্দ করতে বাসার ছাদকেই বেছে নিয়েছে সবাই। ফলে পুরনো ঢাকার শিশুদের ঈদ আনন্দ আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেড়েছে।
পুরনো শহরের মতো এত জমজমাট না হলেও নতুন ঢাকাতেও ঈদের আনন্দে কমতি নেই। বিশেষ করে উত্তরায়, গুলশানে আনন্দ হচ্ছে ভালোই। এই অংশের মানুষ হাতিরঝিলেও ভিড় করেছে। এদের অনেকে আবার স্বপরিবারে গেছেন চাইনিজ বা ফাস্টফুডে। তাই স্কুল পড়ুয়া শিশুদের ঈদ আনন্দ একই রকম রয়ে গেছে।
লালবাগ স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে মাশরাফি। সে বলে, ‘গত ঈদে নামাজ পড়ে রমনা পার্কে গিয়েছিলাম। এবার যেতে পারিনি। ছাদের ওপর টোনাটুনি রান্না করেছি, ঘুড়ি উড়িয়েছি। বাবা-মা ছিল। ভবনের অন্যান্য মানুষেরা এসেছে। অনেক আনন্দ করেছি।’
সেন্ট্রাল রোডের জায়দা পড়ে ক্লাশ টেনে। তার মতে, ঈদের আনন্দ প্রায় একই রকম রয়ে গেছে। তবে আনন্দ করার পদ্ধতি বদলেছে এবার। সে বলে, ‘এবার ঈদের আনন্দ বলতে শুধুই খাওয়া-দাওয়া। করোনা চলে গেলে কোরবানির ঈদে মন ভরে আনন্দ করতে চাই।’
ঢাকার শিশুরা ঈদে ভালো আনন্দ করতে পারলেও এবার আনন্দ নেই উপকূলের ঈদে। সাতক্ষীরার আরিফ এই প্রতিবেদকে মুঠোফোনে জানান, ঈদে এবার নতুন জামা পায়নি সে। এমনকি তাদের বাড়িতে এবার ঈদের খাবারও রান্নাও হয়নি। কারণ ঝড়ে তাদের বাড়িটাই উড়ে গেছে। সারাদিন আনন্দ করার বদলে বাড়ি ঠিক করার কাজে সময় দিতে হয়েছে। এরপর আরিফের বাবা ‘অসহায় লাগছে’ বলে ফোন কেটে দেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্যা চিলড্রেন বলছে, আম্পান ও করোনার কারণে এবার শিশুদের ঈদ উৎসব ফিকে হয়ে গেছে। ঝড় এমন একটা সময়ে হয়েছে যে এই সময়ের মধ্যে সবকিছু নতুন করে শুরু করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। উপকূলের বেশকিছু এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কবলে পড়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলো অকস্মাৎ দারিদ্রতায় পড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গেল ২০ মে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের কারণে হওয়া ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এসব এলাকার মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।