ঘর-ছাদ আর নেটে ঘেঁটে কেটেছে নিরানন্দের ঈদ
২৫ মে ২০২০ ২২:৩২
ঢাকা: সারাদিন ঘরে বসে, শেষ বিকেলে বাসার ছাদে আর ইন্টারনেটে বসে কেটে গেছে ঈদের দিন। আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে ভার্চুয়ালি। করোনাভাইরাস থেকে বাচঁতে হলে এর বাইরে তো কিছু করার নেই—বলেন উত্তর বাড্ডার থানা রোড এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম।
সোমবার (২৫ মে) ঈদের দিন বিকেলে নুরুল ইসলামের বাড়ির ছাদে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এমন ঈদ যাতে আর কোনো দিন না আসে এই প্রার্থনা করছি।’
ঈদ কেমন কাটলো, এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা পরিবার নিয়ে বরিশাল গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ উৎযাপন করি। এবার করোনারভাইরাসের কারণে গ্রামে যাওয়া হয়নি। ঢাকায় থাকলেও বাহিরে যাওয়া বারণ। ঈদের নামাজ পড়ে সকাল থেকেই ঘরে অবস্থান করছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। বিকেল বেলা পরিবার নিয়ে ছাদে হাটাহাটি করেই এবারের ঈদ উৎযাপন করলাম।‘
এ সময় পাশে থাকা তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আর ভালো লাগছে না। ঘরে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে যাচ্ছে। আজকে ঈদের দিন, তারপরও বাইরে বের হতে পারছি না। এমন ঈদ যাতে আর কোনো বছর না আসুক আল্লাহর কাছে এই দোয়া করছি।’
এই পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য রাফসান (৮)। দাদু বাড়িতে বেড়াতে যেতে না পেরে মন খারাপ তার। ঈদের সময় দাদু বাড়ি, নানু বাড়ি কোথাও সে যেতে পারেনি। পারেনি কোথাও ঘুরতেও বের হতে। ‘তারপরও করোনাভাইরাস থেকে বাচঁতে হলে ঘরে থাকতে হবে বলেছেন আব্বু-আম্মু। এজনই আমি ঘরে থাকি’—বলে রাফসান।
নুরুল ইসলাম দম্পতির পাশের ফ্লাটের বাসিন্দা রুনা আক্তারের কাছে ঈদ কেমন কাটলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরে বন্দি থেকে আর কেমন ঈদ উৎসব হবে। সকাল থেকে রান্না বান্না করে। বিকেলে একটু ছাদে ঘুরছি। ইন্টারনেট আর টেলিভিশন দেখে কেটে গেছে দিন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের সময় শ্বশুর বাড়ি মাদারীপুর যাই। এবার ঢাকায় ঈদ করছি। সকালে শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজন সকলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি। শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।‘
এবার বেঁচে থাকাই বড় ঈদ বলে মনে করেন এ গৃহিণী।
এ পরিবারের মতো অনেককেই দেখা গেছে বিকেল বেলা ছাদে উঠে দক্ষিণা হাওয়ায় নিশ্বাস নিতে। যে নিশ্বাস ছিল করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির নিশ্বাস। আগের মতো স্বাধীনভাবে বাঁচার আকুলতা। আর করোনার অভিশাপ থেকে মুক্তির দীর্ঘ শ্বাস।
এদিকে সকালে দেখা গেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। ঈদগাহে হয়নি কোনো নামাজ। নামাজ শেষে দেখা যায়নি কোলাকুলি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করার কোনো দৃশ্য।
মহামারি করোনায় পাল্টে গেছে চিরচেনা সব দৃশ্য। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বহু মানুষের আজকের দিনটিও হাসপাতালে কেটেছে।
করোনায় যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে বেজেছে কষ্টের সুর। ঘরে ঘরে আইসোলেশনে রয়েছে অনেক লোক। সন্তান যেতে পারছেন না বাবা- মায়ের কাছে, বাবা-মা যেতে পারবেন না সন্তানের কাছে। এ দৃশ্য যেন আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে ঈদের দিনে। এমনই এক অদ্ভুদ পরিবেশে উৎযাপিত হয়েছে ঈদ উল ফিতর।
যে ঈদে নতুন কাপড় পড়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশির বাড়িতে যাওয়া যায় না। খোলা নেই কোনো বিনোদন কেন্দ্র। একে নিরানন্দ ঈদ ছাড়া আর কি বা বলা যায়।