Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সালিশের নামে জন সমাগম, আতঙ্কে এলাকাবাসী


২৭ মে ২০২০ ০০:৩৬

ঢাকা: সামাজিক সালিশের সময় প্রায় দুই শতাধিক মানুষের জমায়েত হওয়ার দুদিনের মাথায় একজনের ক‌রোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ায় আত‌ঙ্কে দিন পার কর‌ছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা সরকারি আদেশ অমান্য করে জনসমাগম ঘটিয়ে সালিশ করায় এমনটা হয়েছে। অবিলম্বে সালিশে উপস্থিত সকলকে কোয়ারান্টাইনে রাখারও দাবি করেছেন তারা।

ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা গত ২২ মে সামাজিক সালিশের না‌মে দুই শতাধিক মানুষের সমাগম ঘটান। ওই সালিশে উপ‌স্থিত ছিলেন লাভলু শিকদার নামের একজন। যার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে ওই সালিশের দুদিন পর। এই জনসমাগম থেকে পুরও বিলাসপুরে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ব‌লে ধারনা করছেন এলাকাবাসী। তাই স্থানীয় মানুষের ম‌ধ্যে এক ধর‌নের আতঙ্ক বিরাজ কর‌ছে। এর প‌রি‌প্রে‌ক্ষি‌তে এলাক‌বাসীর দা‌বি, যারা ওই সালিশে উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে হোম কোরাইন্টানে রাখা হোক।

এ বিষয়ে জান‌তে চাই‌লে দোহার থানার নির্বাহী অফিসার আফরোজা আক্তার রিবা বলেন , ‘এই ঘটনাটি ঘটে‌ছে কি না, সে বিষ‌য়ে আমি অবগত নই। আমি এ অ‌ভি‌যোগ নি‌য়ে উদ্বিগ্ন। এ বিষ‌য়ে আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলবো। এছাড়া, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বার জনসমাগম ঘটাতে পারে না।’

অপর‌দি‌কে যার বিরুদ্ধে জনসমাগম ঘটা‌নোর অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে, সেই বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা ব‌লেন, ‘আস‌লে যে অভিযোগ আমার বি‌রু‌দ্ধে করা হ‌য়ে‌ছে এ বিষয়‌টি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বা‌নোয়াট। কারণ আমি ঘঠনাস্থ‌লেই ছিলাম না। কিন্তু টু‌পি‌কে কেন্দ্র ক‌রে যে ঘটনা‌টি‌ ঘ‌টে‌ছে সেই বিষয়‌ সম্প‌র্কে আমি জান‌তে পা‌রি। জানার সা‌থে সা‌থে ঘটনাস্থল খাজার বাজারে যাই। পাশাপা‌শি এলাকার চেয়ারম্যান হি‌সে‌বে আমার দায়িত্ব বিষয়‌টি সমাধান করার। তাই বাধ্য হ‌য়ে শুক্রবার বিকালে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমি ঘটনাটি দোহার থানার ইউএনও ও ডা. জসিমকে অবগত করেছি।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সালিশে উপস্থিত বিলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মেম্বার বলেন, ‘একটা ঘটনা আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি। তা হল আক্কাস শিকদারের মসজিদের ইমামের সাথে একটা ছেলের কথা কাটাকাটি হয়। যার সঙ্গে ইমামের কথা কাটাকাটি হয় সে বাদশা মোল্লার সমাজের মানুষ। এই ঘটনাটি সমাধানের জন্য আমি, বাদশা মোল্লা, নুরুল হক মেম্বার, চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লাসহ বসেছিলাম। অভিযোগের বাদী আমাদের মেনেছে।’

দেশের এই মহামারীতে যেখানে আদালত বন্ধ, স্কুল কলেজ বন্ধ’ ‌ঠিক এমন মুহূর্তে কোনো জনপ্রতিধিনিধি সালিশের নামে শত শত মানুষের সমাগম করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই জনপ্রতিনিধিরা এই ধরনের কোনো সালিশ বা জন সমাগম ঘটা‌তে পারেন না। তিনি আরও বলেন সালিশে উপস্থিতিত লাভলু শিকদার সালিশের দুদিন পরে কোভিড ১৯ টেস্টে পজিটিভ ধরা পরে। তাই এই সালিশে যারা উপস্থিতিত ছিলেন আমিসহ সবাইকে লক ডাউনে থাকতে হবে। এই সালিশের মাধ্যমে বিলাসপুরে করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমি চাই সালিশে আগত সবাইকে লকডাউনে রাখা হোক।’

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ‘উক্ত সালিশে লাভলু শিকদার উপস্থিত ছিলেন। সালিশের দুই দিন পর লাভলু শিকদারের কোভিড ১৯ টেষ্টে পজিটিভ ধরা পরে। এই জনসমাগম থেকে পুরো বিলাসপুরে কোভিড ১৯ ছরিয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে ব‌লে অভি‌যোগ এলাকাবাসীর। তাই এলাকার স্থানীয় বা‌সিন্দারা মনে করেন, যারা সালিশে উপস্থিত ছিলেন এবং ক‌রোনা প‌জে‌টিভ আক্রান্তকারীর সংস্প‌র্শে গি‌য়ে‌ছেন তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা দরকার। না হ‌লে আমা‌দের এলাকার প‌রি‌স্থি‌তি অবন‌তি হ‌বে ব‌লে আমরা ম‌নে ক‌রি।’

বিজ্ঞাপন

খাজার বাজারের ফার্মেসী ব্যবসায়ী বাবলু শিকদার বলেন, ‘দেশের এমন সময়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন মোল্লা ও বাদশা মোল্লার নেতৃত্বে এত বিপুল মানুষের জনসমাগম কোনভাবেই কাম্য নয়। সালিশের দুদিন পরে এই সালিশ থেকে একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। তাই যারা সালিশে উপস্থিতিত ছিলেন তাদের সবাইকে হোম কোয়ারাইন্টাইনে রেখে করোনা প্রতিরোধ করা উচিৎ।’

অপর‌দি‌কে, ঘটনাস্থ‌লে উপ‌স্থিত থাকা আক্কাস শিকদার বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকাল ৪টার সময় আমার বাড়ির সামনে বাজারে প্রায় ২ থেকে ৩ শ মানুষ দেখতে পাই। ঘটনাস্থল থেকে শুনতে পাই আমার মসজিদের ইমামের সাথে আমার প্রতিবেশির এক ছেলের কথা কাটাকাটি নিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা ও বাদশা মোল্লা তাদের সমাজের অনুসারী মানুষজন নিয়ে আমাদের মসজিদে হামলার করার জন্য জড়ো হয়েছেন। এ বিষয়ে ২৪ মে দোহার থানায় একটি জিডি করেছি। যার নম্বর ৫৭৭।

করোনা সালিশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর